বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
অর্থনীতির পরেই যে-ক্ষেত্রটি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেটি হল শিক্ষাক্ষেত্র। লকডাউনের দিন থেকেই রাজ্যের সমস্ত স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংস্থা লাইব্রেরি প্রভৃতি পুরো বন্ধ। নামী কিছু বেসরকারি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি অনলাইন ব্যবস্থায় পঠনপাঠন ও গবেষণা চালু রাখার লড়াই জারি রেখেছে। সরকারি শিক্ষাক্ষেত্রও চেষ্টা করছে তা অনুসরণ করার। কিন্তু নির্মম বাস্তব এই যে সরকারি ক্ষেত্র সেইভাবে পেরে উঠছে না। বিশেষ করে স্কুলগুলি। এর কারণ অনেক: সরকারি ক্ষেত্রের পরিধি সুবিশাল। কিন্তু তার পরিকাঠামো মজবুত নয়, বরং অনেকাংশেই দুর্বল। সরকারকে বাংলার সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছেলেটি বা মেয়েটির শিক্ষার দায়িত্ব বহন করতে হয়। তার মধ্যে দার্জিলিংয়ের দুর্গম পাহাড়ি কোনও গ্রাম যেমন আছে, তেমনি সুন্দরবনের যে অঞ্চলে এখনও দিনেরাতে বাঘের হালুম কানে আসে, আছে সেই জায়গাটিও। বলা বাহুল্য, সরকারি শিক্ষাক্ষেত্রের উপর নির্ভরশীল মানুষের বেশিরভাগই গরিব। অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তারা যেসব দূরবর্তী অঞ্চলে বাস করে সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা ভালো নয়। তারা কী ধরনের ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে সেটাও অনুমান করা যায়। অতএব অর্থনীতির হাল ফেরানোর মতোই সুকঠিন এক চ্যালেঞ্জ হল শিক্ষাক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। এই মুহূর্তের স্বাভাবিকতাকে লকডাউনের আগের পরিস্থিতির সঙ্গে মেলালে চলবে না। আজকের স্বাভাবিকতা অবশ্যই ভিন্নরকম। ইংরেজিতে যাকে ‘নিউ নর্মাল’ বলা হচ্ছে। অর্থাৎ যখন যেমন সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রের কাছেও তার বাড়তি এই মুহূর্তে আশা করা যাবে না।
মাধ্যমিক হল প্রথম বোর্ডের পরীক্ষা। তার পরবর্তী ধাপের নাম উচ্চ মাধ্যমিক। এই দু’টি পরীক্ষায় পাশ একটি দরিদ্রতম পরিবারের কাছেও আজকের ন্যূনতম চাহিদা। কিন্তু এই কোর্স দু’টির সিলেবাস এবং পরীক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভারী। ভালো রেজাল্ট করার জন্য ক্লাস নাইন থেকেই নিরবচ্ছিন্ন প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। এই ব্যাপারে স্কুলগুলির ভূমিকা বিরাট। কিন্তু এ এমন এক দুঃসময়, টানা আটমাস ছেলেমেয়েরা তাদের প্রিয় স্কুলের মুখ দেখেনি। তাহলে তাদের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত প্রস্তুতি গ্রহণ কি বাস্তব? সরকারও এটি বুঝেছে। তাই বিষয়টির দায়িত্ব শুধুমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপর ফেলে রাখেনি। শিক্ষাদপ্তর যথাসময়ে বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামত নিয়েছে। কমিটি দু’টি পরীক্ষারই সিলেবাস সংক্ষেপ করার পরামর্শ দিয়েছে। সরকার সেটি মেনে নিয়ে সুবিবেচকেরই পরিচয় দিয়েছে। সিলেবাস কমানো হচ্ছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। গত বছরের হিসেব ধরলে মাধ্যমিকে দশ-এগারো লক্ষ পরীক্ষার্থী উপকৃত হবে। উচ্চ মাধ্যমিকে উপকৃত হবে প্রায় আট লক্ষ কিশোর-কিশোরী। গতবার মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল ফেব্রুয়ারিতে। উচ্চ মাধ্যমিক মার্চে। বস্তুত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ করাটাই এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বলা বাহুল্য, আরও কঠিন হয়েছিল রেজাল্ট বার করা। কবে স্কুল খুলবে এবং ২০২১-এ এই পরীক্ষা দু’টি কবে নেওয়া সম্ভব হবে সরকার এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। সরকারকে মাথায় রাখতে হচ্ছে, একাধিক রাজ্য ইউরোপের কোনও কোনও দেশের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে স্কুল খুলেও অল্পদিনেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। একদিকে ছেলেমেয়ের কেরিয়ার এবং অন্যদিকে তাদের স্বাস্থ্যরক্ষার বাধ্যবাধকতা। অতএব যাবতীয় পদক্ষেপ করতে হবে দু’কুল সামলে। এই বিষয়ে অভিভাবকদেরও সহযোগিতা এবং সহানুভূতি কাম্য।