বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
হিন্দিকে ভারতের প্রধান ভাষা হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা বহুদিনের। এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি দক্ষিণ ভারতের। জোরালো প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল তামিলনাড়ু থেকে। দেশ স্বাধীন হওয়ার এক দশক আগেই। ১৯৩৭-৪০। চার বছর তীব্র আন্দোলন হয়েছিল দ্রাবিড় ভূমিতে। হিন্দি-বিরোধী প্রবল আন্দোলন স্বাধীন ভারতেও ফের একবার হয়েছিল। ১৯৬৫-তে। তখন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। দাক্ষিণাত্যের প্রবল আপত্তির সামনে নত হয়ে নেহরু আশ্বস্ত করেছিলেন, অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে হিন্দি কোনওভাবেই চাপিয়ে দেওয়া হবে না। মোদি সরকারের ‘শিক্ষানীতি ২০২০’ কেন তবে ৫৫ বছর বাদে নতুন করে সেই বিতর্কে ইন্ধন জোগাচ্ছে? এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ‘হিন্দি দিবস’-এ অমিত শাহের একটি মন্তব্যকে (ভারতের একটি জাতীয় ভাষা থাকা প্রয়োজন) ঘিরে দেশজুড়ে নতুন বিতর্ক দানা বাঁধে। সেটা মিটে যাওয়ার পরেও হিন্দি নিয়ে উস্কানির বিরাম নেই যেন! আশঙ্কামতোই, দক্ষিণ ভারত সবার আগে প্রস্তাবিত ভাষানীতির বিরোধিতা করেছে। ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে নানাভাবে প্রতিবাদ। সরব হয়েছেন এইচ ডি কুমারস্বামী, শশী থারুর, এম কে স্ট্যালিন। প্রথম জন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী। দ্বিতীয় জন কেরল থেকে নির্বাচিত কংগ্রেস এমপি। তৃতীয় জন তামিলনাড়ুর বিরোধী দলনেতা। মারাত্মক অভিযোগ করেছেন ডিএমকে এমপি কানিমোঝি—বিমানবন্দরে হিন্দি বলতে না পারায় তাঁর নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক সিকিউরিটি অফিসার! প্রতিবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেস এমপি কার্তি চিদম্বরম।
সব মিলিয়ে ব্যাপারটা তিক্ততার দিকে গড়াচ্ছে আঁচ করে মেরামতের চেষ্টায় গোড়াতেই নামানো হয় দক্ষিণ থেকে নির্বাচিত দুই গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে। নির্মলা সীতারামন এবং এস জয়শঙ্কর ট্যুইট করে আশ্বস্ত করেছেন, নয়া শিক্ষানীতি এবং হিন্দি কোনও রাজ্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া হবে না। সব রাজ্যের কথা সরকার নিশ্চয় বিবেচনা করবে। উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডুরও অনুরোধ, শিক্ষানীতি নিয়ে কেউ যেন চট করে কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত না হন। তার আগে বিষয়টি ভালো করে জানা জরুরি। বেঙ্গালুরুর তরুণ বিজেপি এমপি তেজস্বী সূর্যের দাবি, হিন্দি চাপিয়ে দেওয়াটা নতুন শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য, হিন্দি পঠনপাঠনে উৎসাহ বৃদ্ধি। সুর নরম করেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী। তাঁদের মুখে কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয়ের সুর। সমন্বয়টা সবার আগে দরকার ছিল। তাহলে নতুন করে তিক্ততার পরিবেশ তৈরি হতো না। হিন্দির আধিপত্য বিস্তারের আশঙ্কা বার বার জাগিয়ে দিয়ে উল্টে হিন্দির ক্ষতি করা হচ্ছে না কি? কেন্দ্রকে বুঝতে হবে—এর থেকে অহিন্দিভাষীদের মধ্যে অনাবশ্যক হিন্দি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি বিরোধিতা, ভীতি কিংবা ঘৃণার মানসিকতা যেন কোনওভাবেই গড়ে না ওঠে। সেটা দেশের ঐক্য ও সংহতি রক্ষার জন্য খুব খারাপ বিজ্ঞাপন হবে।