বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
সাধারণতন্ত্র দিবসের এই কুচকাওয়াজকে ঘিরে আন্তরিক দেশাত্মবোধের উষ্ণতা গ্রহণ করার রীতি দীর্ঘদিনের। এর আবেদন আমাদের সশ্রদ্ধ আবেগের কাছে। এই দিনটি নিছকই একটা ছুটির দিন নয়। এর একটা গভীর তাৎপর্য আছে। দেশের মানুষের হাতে ক্ষমতা যাওয়া বা গণতন্ত্রের উন্মেষ ঘটিয়েছে এই দিনটিই। এই দিনটিতেই মানুষের ক্ষমতায়নের জন্মদিন। তাই সাধারণ মানুষই এই দিনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু আমরা এই দিন কী দেখলাম? একদিকে যখন রাজশক্তির তত্ত্বাবধানে রাজপথে কুচকাওয়াজ চলছে, তখন অন্যদিকে শাহিনবাগে সাধারণ মানুষের আন্দোলন রাঙা হয়ে উঠেছে তেরঙ্গায়। এও তো এক দেশাত্মবোধ। দেশের আত্মাকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে দেওয়ার বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধ মানুষের প্রতিবাদ। সেই প্রতিবাদ তো আজ শুধু শাহিনবাগে সীমাবদ্ধ নয়, সেই আন্দোলন আজ ছড়িয়েছে সারা দেশে। কোনও রাজনৈতিক দলের মদতে নয়, কোনও নেতার ডাকে নয়, সেই আন্দোলনে আজ মানুষ পথে নেমেছে নিজের অন্তরাত্মার ডাকে। বুঝেছে, আজ ঘরে বসে থাকার সময় নয়। ঘরে বসে থাকলে আরও বড় বিপন্নতা তাকে গ্রাস করছে। দেশের সামনে এখন আগ্রাসী গেরুয়াকরণের বিপদ। এর থেকে বাঁচতে গেলে, পথের লড়াই এড়িয়ে গেলে চলবে না। শাহিনবাগ সেই আন্দোলনের প্রতীক। সেখানেও গতকাল দেশাত্মবোধ দেখল সকলে। সেখানে সাধারণতন্ত্র দিবসকে পালন করা হল। সেখানেও উড়ল ভারতের জাতীয় পতাকা। সারাদিন ধরে চলল, দেশাত্মবোধক গান। স্লোগান উঠল, দেশকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বাঁচাতে হবে। বক্তারা বললেন, এই শাহিনবাগের অন্তরের ভিতরেও লুকিয়ে আছে একটা নির্মল, সুন্দর ভারতবর্ষ। সেটা একেবারে অকৃত্রিম। এই স্বচ্ছতাকে সারা দেশ দেখতে পাচ্ছে। অথচ শাসক দল দেখতে পাচ্ছে না। এটা খুবই দুর্ভাগ্যের।
এই দিনটিকে প্রতিবাদকারীরা বিশেষ দিন হিসেবেই বেছে নিয়েছিলেন। কেননা, আমাদের সংবিধানের জয়যাত্রা শুরু হয়েছিল এই দিন থেকেই। এই লড়াই শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক ইস্যুর লড়াই নয়। এই লড়াইয়ের আরও বৃহত্তর তাৎপর্য আছে।
সামনেই দিল্লি বিধানসভার নির্বাচন। সেই নির্বাচনে শাহিনবাগ আন্দোলন প্রভাব ফেলবেই। কেন্দ্র রাজধানীর এই লড়াইকে প্রেস্টিজ ফাইট হিসেবেই নিয়েছে। হওয়ারই কথা। দিল্লিতে হারলে মুখ পুড়বে বিজেপি নেতাদের। তাই তারাও যে কোনও কৌশলে দিল্লি জয়ে নেমেছে। অমিত শাহ এক জনসভায় বলেছেন, আপনারা দিল্লির ভোটে ইভিএমে বিজেপির বোতাম এমন জোরে টিপুন যাতে শাহিনবাগের আন্দোলনকারীরা ভয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। কেজরিওয়ালও পুনরায় ক্ষমতা দখল করতে চাইছেন। এই লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ কোনদিকের বোতাম টেপেন সেটা অবশ্যই দেখার। শাহিনবাগ বলছে, বোতাম টিপব তো আমরাই। কারা পালায়, আমরা দেখিয়ে দেব।
সুতরাং এবারের সাধারণতন্ত্র দিবস দেখল অন্যতর দেশাত্মবোধ। কে যে প্রকৃত দেশপ্রেমী, তার জবাব নিহিত রয়েছে ভবিষ্যতের গর্ভে। এখনই তার সত্যতা বোঝার সময় আসেনি।