বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
এই সিদ্ধান্তে কি সত্যিই অর্থনীতি চাঙ্গা হবে? দেখা যাক কেন সরকার এমন একটা পদক্ষেপ নিল। প্রথমত, দেশের জিডিপি ৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে। এবং তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত কর্পোরেট সংস্থাগুলির লোকসানের বহর। খুব স্বাভাবিকভাবেই লোকসানে চলা একটা কোম্পানি সবার আগে চাইবে তার বাড়তি কর্মী ছেঁটে ফেলতে। যা গত কয়েক মাস ধরেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে। গাড়ি কোম্পানিগুলির উপর যেহেতু সবচেয়ে বেশি প্রভাবটা পড়েছে, তাই তারাই এ ধরনের কাজে অগ্রণী হয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। পাশাপাশি রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি, বিস্কুট প্রস্তুতকারক সংস্থাও। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষের হাতে নগদের জোগান কমে যাওয়ায় পণ্য বিক্রি কমেছে। ফলে পণ্যের সাপ্লাইও কমতে শুরু করেছে বাজারে। সংস্থাগুলি বন্ধ করে দিচ্ছে উৎপাদন। সরকারের আশা, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে যে অর্থ বাঁচবে, তা উৎপাদন বা লগ্নিতে ব্যবহার করবে কর্পোরেট জগৎ। যার থেকে কর্মসংস্থান তৈরি হবে। চাকরি হলে হাতে টাকা আসবে। এবং শেষ পর্যন্ত মানুষ স্তব্ধ হয়ে বসা মার্কেটকে জিনিসপত্র কিনে সচল করবে। পুরোটাই একে অপরের সঙ্গে জড়িত। যেখানে বাজার অর্থনীতি এই মুহূর্তে তলানিতে এসে ঠেকেছে, আন্তর্জাতিক মার্কেটে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে নিত্যদিন চড়ছে পেট্রল-ডিজেল, এই অবস্থায় এমন একটা সিদ্ধান্ত বিশল্যকরণী হয়ে দেখা দিতেই পারে। যদি ব্যক্তিগত আয়কর কিংবা জিএসটিতে ছাড় দেওয়া হতো, তাহলে তার প্রভাবটা সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যেত না। যা এক্ষেত্রে পাওয়ার আশা রয়েছে।
তবে সব মুদ্রার একটা উল্টো পিঠ থাকে। এরও আছে। মোটামুটি যা একটা হিসেব যাওয়া পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এই ছাড়ের ফলে কেন্দ্রীয় কোষাগারে প্রায় দেড় লক্ষ কোটি টাকার রাজস্ব কম আসবে। যে অঙ্কটা নেহাত কম নয়! বাজেট প্রস্তাবে এই ঘোষণা রাখলে কী হতো? সেখানে তো কর্পোরেটের উপর বাড়তি বোঝা চাপিয়ে সাধারণ মানুষকে খুশি করার একটা বাড়তি প্রচেষ্টা দেখিয়েছিল সরকার! এর ফলে একে তো ভোটারদের সামনে সরকারের মনমোহিনী একটা রূপ সামনে এসেছিল যে, দ্বিতীয় ইনিংসে নরেন্দ্র মোদি সাধারণ মানুষকে রেহাই দিয়ে পয়সা কামানেওয়ালাদের উপর চাপ বাড়াচ্ছেন। দ্বিতীয়ত বাজেট প্রস্তাবে এমন ঘোষণা করার অর্থ হল অ্যানেক্সচারে দেখাতে হবে, আর্থিক বর্ষে মোট কত টাকার কর সরকার ছাড় দিল। অর্থাৎ কোষাগারে কত টাকা আসতে পারত, যা এল না। তখন মিডিয়াওয়ালারা কিন্তু সরকারের উপরই খড়্গহস্ত হতো। লেখালেখির কারণে চাপ বাড়ত। যা এখন প্রস্তাব পাশ করিয়ে নেওয়ার ফলে আর হবে না। গোপনেই বাড়তিটা সারা হয়ে যাবে।
যদি এই পদক্ষেপে দেশের অর্থনীতির সুদূরপ্রসারী লাভ হয়, তাহলে অবশ্যই ভোটাররা মোদি সরকারের জয়গান গাইবে। কিন্তু না হলে? একটা আক্রমণ কিন্তু বিরোধীদের আস্তিনে তৈরিই থাকছে—সাধারণ মানুষ নন, কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে খুশি করেই অর্থনীতির বেড়ি আলগা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।