বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
(মুনোজ-হ্যাটট্রিক, মোরান্তে, দিওয়ারা, জেসুরাজ)
নেরোকা এফসি- ২
(ফিলিপ আদজা, সুভাষ সিং)
অভিজিৎ সরকার কল্যাণী: এভারেস্ট উচ্চতায় দলের আত্মবিশ্বাস। অশ্বমেধের ঘোড়ার মতো ছুটছে কিবু ভিকুনার মোহন বাগান। শুক্রবার নেরোকার বিরুদ্ধে তারই প্রতিফলন ঘটল কল্যাণী স্টেডিয়ামে। প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল করে ম্যাচ প্রায় পকেটে পুরে নেয় সবুজ-মেরুন। শেষ পর্যন্ত প্রেম দিবসে সমর্থকদের মধুর জয় (৬-২) উপহার দিলেন সাহিল-বাবারা।
এবারের আই লিগে মোহন বাগানের হয়ে প্রথম হ্যাটট্রিক করলেন ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজ। এবারের আই লিগের তিন নম্বর হ্যাটট্রিকটি করলেন তিনি। প্রথম দুটি হ্যাটট্রিক ডিপান্ডা ডিকা ও নেরোকার প্রীতম সিংয়ের নামের পাশে রয়েছে। ন’গোল করে সর্বাধিক গোলদাতার তালিকায় ডিপান্ডা ডিকাকে টপকে একনম্বরে উঠে এলেন মুনোজ। ১২ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিগ টেবলে একনম্বরে থাকা বেইতিয়ারা অন্য দলের থেকে ক্রমেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছেন। পরিস্থিতির আচমকা বদল না হলে মোহন বাগানকে থামানোর ক্ষমতা কারও নেই। এক গোল খেলে পাল্টা দু’গোল দেওয়ার দম রয়েছে কিবুর ছেলেদের। আর তাই টানা দশ ম্যাচে অপরাজিত সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। এর মধ্যে এসেছে পর পর পাঁচটি জয়। ১৩ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে নেরোকা রয়েছে দশম স্থানে। তাতে অবনমনের আশঙ্কায় থাকা ইস্ট বেঙ্গলের কিছুটা সুবিধা হল।
বেইতিয়ার মতো প্লে-মেকার থাকলে একটা দলের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। আর দলটার সম্পদ এদিনের ম্যাচের সেরা ফ্রান গঞ্জালেজ। গোলরক্ষক ছাড়া তিনি সব পজিশনেই খেলতে পারেন। মোহন বাগানের পাঁচটি গোলের ক্ষেত্রে বেইতিয়ার অবদান রয়েছে। ১০ মিনিটে তাঁর কর্নার থেকে শূন্যে একসঙ্গে হেড করতে ওঠেন বাবা দিওয়ারা ও ফ্রান গঞ্জালেজ মুনোজ। কিন্তু বাবার স্পটজাম্প একেবারেই ফলস। পিছন থেকে নিখুঁত টাইমিংয়ে হেডে বল জালে জড়িয়ে দেন মুনোজ (১-০)। গোল করার পরেই পুলওয়ামার শহীদ জওয়ানদের স্যালুট করে সম্মান জানান মুনোজ।
তিন মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান বাড়িয়ে ২-০ করে মোহন বাগান। প্রথম গোলের মতোই বেইতিয়ার ভাসানো কর্নারে মাথা ছুঁইয়ে এবার স্কোরশিটে নাম লেখান আর এক ফ্রান, মোরান্তে। ২৪ মিনিটে তৃতীয় গোল পায় সবুজ-মেরুন। বেইতিয়ার ক্রস ধরে রক্ষণের জটলা থেকে হেডে ফের গোল করেন মুনোজ (৩-০)। এই সময় মোহন বাগানের আক্রমণের স্রোতে নড়ে যায় নেরোকার রক্ষণ। পরের মিনিটেই ফ্রান গঞ্জালেজকে বক্সে ফাউল করেন প্রীতম সিং। পেনাল্টি পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হন গঞ্জালেজ। হাতছাড়া করেন হ্যাটট্রিকের সুযোগও। যদিও সেই আপসোস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
তার আগে ৩৬ মিনিটে নেরোকা বক্সে সুহেরের লব থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান বাবা দিওয়ারা (৪-০)। তাঁর নামের পাশে এখন ছ’গোল। ৪১ মিনিটে সুভাষ সিংয়ের থ্রু ধরে গতি বাড়িয়ে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করেন কলকাতায় খেলে যাওয়া নেরোকার স্ট্রাইকার ফিলিপ আদজা (৪-১)। ৪৫ মিনিটে বেইতিয়া থেকে বাবার ফ্লিক মোরান্তে মিস করলে সেই বল ধরে ফ্রান গঞ্জালেজ হ্যাটট্রিক করতে ভুল করেননি (৫-১)। ঠিক তারপরেই নেরোকার সুভাষ সিং গোল করে ব্যবধান কমান (৫-২)।
বিরতির আগেই সাত গোল। নেরোকা রক্ষণে তখন থরহরিকম্প! ঠিক এমন সময়ে তাল কাটলেন ধনচন্দ্র সিং। ৬০ মিনিটে ফিলিজ আদজার শট ক্রসপিসে লেগে ফিরে এলে রোনাল্ড সিংয়ের ব্যাকভলি গোল লাইনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে সেভ করেন মোহন বাগান লেফট ব্যাক। তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে নেরোকার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি পালসন মোজেস। কিন্তু আদজা পেনাল্টি মিস করেন।
৬৯ মিনিটে নাওরেমের জায়গায় জেসুরাজকে নামান কোচ ভিকুনা। নেমেই পরের মিনিটে বেইতিয়ার কর্নার থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান তিনি (৬-২)। ৮৮ মিনিটে জেসুরাজের পাস থেকে ওপেন সিটার মিস করেন বাবা দিওয়ারা। প্রিয় দল হাফ-ডজন গোল করায় প্রায় ১৩ হাজার সবুজ-মেরুন সমর্থক মোমবাতি ও মোবাইলের আলো জ্বেলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। আসলে, বসন্তের শুরুতে মোহন বাগান এখন আই লিগ জয়ের প্রমাদ গুনছে।
মোহন বাগান: শঙ্কর রায়, আশুতোষ মেহতা, ফ্রান মোরান্তে, ফ্রান গঞ্জালেজ, ধনচন্দ্র সিং, শেখ সাহিল, হোসেবা বেইতিয়া, টারসুনভ (গুরজিন্দর ৬২ মি:), নংডাম্বা নাওরেম (রোমারিও জেসুরাজ ৬৯ মি:), সুহের (ব্রিটো ৭৫মি:), বাবা দিওয়ারা।