বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
মাজদিয়া-পানশিলা পঞ্চায়েতের উত্তর কলাতলা খেজুরবাগানের রামকৃষ্ণ দেবনাথ ওরফে মামা। দীর্ঘদিন ধরেই জেলার বিভিন্ন মাঠে দাপিয়ে ফুটবল খেলেছেন। একজন দক্ষ গোলরক্ষক হিসাবে তাঁর নামডাকও রয়েছে। কলকাতার ইস্টার্ন রেলওয়েতেও সুনামের সঙ্গে গোলরক্ষকের ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। জেলা বা কলকাতার মাঠে মামা নামেই বেশি পরিচিতি। দীর্ঘদিন খেলাধূলা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে স্থানীয় গেঞ্জির কারখানায় কাজ করছেন তিনি। বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, ভাই রয়েছে। লড়াই করে চলে ওদের সংসার। বাবা সামান্য তাঁত শ্রমিক। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ায় কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। রামকৃষ্ণের আক্ষেপ, ‘তিন বছর ইস্টার্ন রেলওয়েতে ফুটবল খেলেছি। এমনকী কলকাতা লিগে দলকে এক বছর চ্যাম্পিয়ন করতে পেরেছিলাম। কিন্তু ওদের কাছে বারবার অনুনয়-বিনয় করেও একটা কাজ জোটাতে পারিনি। কেউ মুখ তুলেও তাকায়নি। বাধ্য হয়ে গেঞ্জি কারখানায় কাজে লেগেছি।’ এত কষ্টের পরেও হাল ছাড়তে নারাজ রামকৃষ্ণ। কাজে যাওয়ার আগে বাড়ির পাশের মাঠে নিয়মিত অনুশীলন করেন। খেলা যে তাঁর প্রাণ। একই অবস্থা চর-ব্রহ্মনগর পশ্চিমপাড়ার রানি ভৌমিকের। বাবা একজন সব্জি বিক্রেতা। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন রানির। ইতিমধ্যে জাতীয় ও রাজ্যস্তরে সুনামের সঙ্গে ফুটবল খেলেছেন। এখন খেলাধুলো বন্ধ। তবুও নিয়মিত অনুশীলনের পাশাপাশি সংসারের অভাব দূর করতে মাঝে মধ্যেই সেলাইয়ের কাজ করতে হচ্ছে। কাকপাড়ার হরিদাস দাসের ছোট থেকেই স্বপ্ন, বড় ফুটবলার হওয়ার। গ্রামে-শহরে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে তাঁকে ‘হায়ার’ করেন অনেকে। টাকার বিনিময়ে সেই দলের হয়ে খেপ খেলে মোটামুটি ভালোই আয় হতো। কোভিডের কারণে সব বন্ধ। পেটের টানে কৃষ্ণনগর ও নবদ্বীপ ঘাট রুটে অটো চালাতে হচ্ছে তাঁকে। চর-ব্রহ্মনগর মাঝেরপাড়ায় নন্দগোপাল রায়। টুর্নামেন্টে খেপ খেলে তাঁরও রোজগার ভালোই ছিল। খেলা না থাকায় রুটিরুজির টানে বাবার সঙ্গে জমিতে কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। প্রাক্তন ফুটবলার নির্মল ভৌমিক বলেন, আমিও খেলার সুবাদে এখন রেলে চাকরি করছি। এই অঞ্চলে ফুটবল খেলার একটা প্রভাব রয়েছে। অনেকেই কলকাতার মাঠে সুনামের সঙ্গে খেলছেন। করোনা পরিস্থিতিতে খেলাধুলো না থাকায় সংসার টানতে নানা ধরনের কাজে নামতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। সরকার যদি গ্রামবাংলার এই খেলোয়াড়দের একটু সাহায্য করে তবে আগামীতে এখান থেকে অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবে।
শুধু রামকৃষ্ণ, নন্দগোপাল, নীতীশরা নন, নবদ্বীপ ব্লকের চরমাজদিয়া, চরব্রহ্মনগর, মাজদিয়া-পানশিলা, স্বরূপগঞ্জ এলাকায় বেশিরভাগ ছেলেমেয়ের ধ্যানজ্ঞান বলতে একমাত্র ফুটবল। মাঠ দাপানো ছেলেরা এখন কেউ শ্রমিক কেউ বা অটোচালক। কোভিড তাঁদের সেই গতি কেড়ে নিয়েছে। নিজস্ব চিত্র