বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রোগীকে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু, চিকিৎসার জন্য আগাম টাকা না দিতে পারায় রোগীকে ভর্তি নেয়নি হাসপাতাল। এর ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট আরও বাড়তে থাকে। জরুরি বিভাগের চেয়ারে বসেই রোগীর মৃত্যু হয়।
নাসিম সাহেব শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন। ওইদিন রাত ৯টা নাগাদ তিনি বাড়িতে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের লোকজন তড়িঘড়ি তাঁকে বাইকে করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। অভিযোগ, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। সেখানকার কর্মী রোগীর চিকিৎসা বাবদ আগাম টাকা জমা দেওয়ার কথা বলেন। দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসায় ওই মুহূর্তে রোগীর পরিবারের লোকজনের কাছে নগদ টাকা ও স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড কিছুই ছিল না। তাঁরা রোগীকে ভর্তি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু, কোনও মতেই তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়নি। ফলে তাঁর চিকিৎসাও শুরু করা হয়নি। জরুরি বিভাগের ভিতরে বিনা চিকিৎসাতেই নাসিম সাহেবের মৃত্যু হয়।
ঘটনার প্রতিবাদে রোগীর পরিবারের লোকজন হাসপাতালে অভিযুক্ত কর্মীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। এমনকী, উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালে কাচের একটি দরজা ভাঙচুর করে। এর জেরে হাসপাতাল চত্বরে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিলে মৃতের আত্মীয়রা শান্ত হন। রাত ২টো নাগাদ বিক্ষোভ উঠে যায়। মৃতের ছেলে শেখ ডালিম হাসপাতালের বিরুদ্ধে পুলিসে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
মৃতের ভাগ্না আবির মহম্মদ মণ্ডল বলেন, রাতে মামা কাজ থেকে বাড়ি ফিরে শ্বাসকষ্টের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। তাকে বাইকে করেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অক্সিজেনের অভাবে মামা জরুরি বিভাগের সামনে বসে ছটফট করছিল। মামার চিকিৎসা শুরু করার জন্য আমরা অনেক অনুরোধ করছিলাম। তাদের বলা হয়েছিল, নগদ টাকা ও স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড আত্মীয়স্বজনরা নিয়ে আসছে। আমরা হাসপাতালের সমস্ত খরচ মিটিয়ে দেব। এমনকী, আমার ভাই শেখ ডালিম হাসপাতালের কর্মীদের পায়ে ধরে অনুরোধ করার পরেও তারা মামার চিকিৎসা শুরু করেনি। জরুরি বিভাগের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের কর্মী সেই সময় ফোনে ব্যস্ত ছিল। আমাদের কোনও অনুরোধই তারা শুনতে রাজি হয়নি। দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসা না হওয়ার কারণেই মামার মৃত্যু হয়। পরিবারে একমাত্র মামাই রোজগার করতেন। এখন পরিবারের কী হবে তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি। এদিকে পুলিস ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সমস্ত ঘটনা সিসিটিভির ফুটেজে দেখেছে। ফুটেজ দেখে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুরের প্রশাসনিক বৈঠক থেকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের অন্তর্ভুক্ত রোগীদের ও দুঃস্থ রোগীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনওভাবেই বঞ্চিত করা যাবে না। চিকিৎসার সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তাদের দিতে হবে। হাসপাতালের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দায়ের হলে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এমনকী, হাসপাতালের লাইসেন্স পর্যন্ত বাতিল করা হতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশের পরেও শহরে বেসরকারি হাসপাতালে এরকম অমানবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে সুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, আমাদের সেই সময় জরুরি বিভাগে কোনও বেড ছিল না। নাইটের ম্যানেজার বেডের ব্যবস্থা করছিলেন। বিষয়টি আমাদের ফোনে জানিয়েছিলেন। যদিও এই ঘটনার জন্য আমরা জরুরি বিভাগের নাইট ম্যানেজারকে শোকজ করেছি। পুলিস ঘটনার বিষয়ে সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখছে।