বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
মুর্শিদাবাদ শহরে ঢোকার মুখে লালবাগ সদরঘাট সংলগ্ন এলাকায় রাস্তার পাশেই একটি ছোট দোকানে গত ২০ বছর ধরে সাইকেল সারান বাসুদেববাবু। জিয়াগঞ্জ দেবীপুর হাইস্কুলে দশম শ্রেণীতে উঠে মাস তিনেক স্কুলে যাওয়ার পরই পড়াশোনায় ছেদ পড়ে তাঁর। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় সংসারের হাল ধরতে দশম শ্রেণীতেই পড়াশোনায় ইতি টেনে বাবার সঙ্গে চাষের কাজে যোগ দেন। পরে চাষের কাজ ছেড়ে লালবাগ সদরঘাট এলাকায় একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সাইকেল সারানোর কাজ শুরু করেন। দোকানে কাজের ফাঁকে বা অবসর সময়ে কবিতা লেখেন। খাতায়-কলমে মনে জমে থাকা কথাগুলি ফুটে উঠে অক্ষরে অক্ষরে। দোকানে সাইকেল সারাতে আসা লোকজনের হাতেই নিজের লেখা কবিতা পড়ার জন্য তুলে দেন। কবিতাগুলি একটি বই আকারে ছাপার ইচ্ছে রয়েছে। এনিয়ে এলাকার বেশ কয়েকজন শিক্ষক এবং বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে জানান তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কবিতা লিখে যেতে চান।
বাসুদেববাবু বলেন, ছোটবেলা থেকে সংসারের জোয়াল কাঁধে চেপে যাওয়ায় দশম শ্রেণীতে উঠেই স্কুল ছাড়তে হয়। কিছুদিন চাষবাসের কাজ করার পর সাইকেল সারানোর কাজ শুরু করি। বেশিদূর পড়াশোনা না করলেও ছাত্রজীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা পড়েছি। কর্মজীবনে প্রবেশ করলেও মনে মনে কবিতা লেখার ইচ্ছা রয়েই গিয়েছিল। তাই অবসর সময়ে কবিতা লিখতে শুরু করি। চোখের সামনে যা ঘটে চলেছে তা নিয়ে কবিতা লিখছি। আগে খাতায় লিখে রাখতাম। কয়েকদিন আগে ছাপিয়ে এনেছি। সাইকেল সারাতে আসা লোকজন একসঙ্গে পড়তে পারেন। সময় থাকলে অনেকে চোখ বুলিয়ে নেন। ছোট ছেলে পড়াশোনা শেষ করে সংসারের হাল ধরলেই কাজ ছেড়ে বাকি জীবনটা কবিতা নিয়েই কাটাতে চাই।
স্ত্রী পাতাসিদেবীকে কবিতা পড়ে শোনান বাসুদেববাবু। পাতাসিদেবী বলেন, কোনওদিন স্কুলে যাইনি, পড়তে পারি না। নিরক্ষর হওয়ায় খুব আফশোস হয়। তবে কোনও নতুন কবিতা লিখলেই আমাকে প্রথমে পড়ে শোনায়। তিন ছেলের মধ্যে দু’জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছোট ছেলে অরুণ মাহাত বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজের বাংলা অনার্সের ছাত্র। অরুণ বলেন, বাবার কবিতা খুব ভালো লাগে। আমি চাই, বাবা লেখা চালিয়ে যাক।
স্থানীয় ব্যবসায়ী অনির্বাণ চৌধুরী বলেন, বাসুদেবদা কবিতার মধ্যে দিয়ে পরিবেশ দূষণ, সবুজায়ন সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। মাঝেমধ্যেই কবিতার খাতা নিয়ে গিয়ে পড়ি। সাইকেল সারাতে আসা লোকজনের প্রশংসায় মুখ লাল হয়ে যায় বাসুদেববাবু। কবিতাগুলি বই আকারে প্রকাশ করাই তাঁর আগামী দিনের লক্ষ্য।