বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
বোলপুরের অতিরিক্ত পুলিস সুপার শিবপ্রসাদ পাত্র বলেন, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে আক্রোশের বসে মহিলার স্বামী সুভাষবাবুকে কুপিয়ে খুন করেছে বলে সে জেরায় স্বীকার করেছে। সেইমতো ওই দম্পতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের হেফাজতে নিয়ে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ অক্টোবর সকালে সুভাষবাবু বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু রাত ৮টার পর থেকে তাঁর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরের দিন সুভাষবাবুর পরিবারের তরফে নানুর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিস জানিয়েছে, ওইদিন সুভাষবাবু বাইক নিয়ে ইলামবাজার আসেন। সেখানে এক ব্যক্তির সঙ্গে দেখা হয়। পরে তিনি বাইক নিয়ে দুবরাজপুরের খোয়াজ মামুদপুরে আসেন। পুলিসের দাবি, সেখানে তাঁর মোবাইলের শেষ টাওয়ার লোকেশন দেখা যায়। তারপর মোবাইলটি বন্ধ ছিল।
পুলিস সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্তে নেমে ওইদিন থেকেই সেখানকার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে শেখ মোতিউর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই পুলিস খুনের ঘটনা কিনারা করে। পুলিসের দাবি, অভিযুক্ত মোতিউর জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, সুভাষবাবকে তার স্ত্রীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় সে দেখে ফেলে। তারপরই একটি শাবল দিয়ে আঘাত করে খুন করা হয়। পরে কুড়ুল জাতীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে কুপিয়ে দেহ ছিন্ন ভিন্ন করে। এমনকী, কাঁধ থেকে কোমর পর্যন্ত অংশ একটি বস্তায় ঢুকিয়ে বাড়ি থেকে কয়েশো মিটার দূরে একটি পুকুরের পাড়ে মাটিতে পুঁতে দেয়। মাথা, পা ও হাতের একাংশ তার বাড়ি থেকে কয়েক কিমি দূরে অজয় নদে ভাসিয়ে দেয়। তারপর অভিযুক্ত সুভাষবাবুর বাইকটি চালিয়ে নানুরে একটি বিএড কলেজের সামনে রেখে দিয়ে চলে আসে।
পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, শাবল দিয়ে আঘাত করার পর সুভাষবাবুর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাঁকে টুকরো টুকরো করে কোপানো হয়। তাছাড়া বস্তা বন্দি করার জন্য টুকরো করা হয়েছিল। গোটা ঘটনায় তার স্ত্রী সঙ্গে ছিল। এমনকী, প্রমাণ লোপাটের জন্য দেহের অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেছিল। পুলিসের দাবি, অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই জায়গায় মাটি খোঁড়া হয়। তবে মাথা সহ পায়ের অংশ অজয় নদে ভাসিয়ে দেওয়ায় তা উদ্ধারে বেগ পেতে হয়েছে।
স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন সকালে মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে দুবরাজপুরের খোজমামুদপুরে মানুষের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যায়। সেখানে অভিযুক্তের বাড়ি থেকে কিছুদূরেই ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পুলিস মাটি খুঁড়ে মৃতদেহের একাংশ উদ্ধার করে। দেহের একাংশ পচে যাওয়ায় এলাকায় তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। পরে একটি গাড়িতে করে দেহের একাংশ পুলিস নিয়ে যায় সিউড়ি সদর হাসপাতালের মর্গে। অভিযুক্তের একতলা পাকা বাড়িটির পিছন দিকে রয়েছে ধানজমি। এছাড়া বাড়ির দু’দিকে রয়েছে দরজা। পুলিস তদন্তের স্বার্থে বাড়ির দরজার বাইরে থেকে তালা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত মোতিয়ার চাষাবাদ করত। স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য এই ঘটনায় কিছু বলতে চাননি। পুলিস এদিন দুপুরে পুলিস কুকুর নিয়ে ইলামবাজার সংলগ্ন অজয় নদের বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি করে। অজয় নদে ডুবুরি নামিয়েও তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু তারপরও উদ্ধার হয়নি। পুলিস জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার ফের তল্লাশি চালানো হবে।
অন্যদিকে, এদিন মৃতের স্ত্রী সহ তাঁর পরিবারের সদস্যরা দুবারজপুর থানায় আসেন। সেখানে তাঁরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃতের এক আত্মীয় বলেন, ষড়যন্ত্র করে সুভাষবাবুকে খুন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।