বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
একদা মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিশ্বাসভাজন পদাধিকারী ছিলেন রামচন্দ্র সেন। তিনি ছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। তদানীন্তন রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে তাঁর বিবাদ হয়। নবাবের হস্তক্ষেপেই মেটে সেই বিবাদ। সেই সুবাদে কুড়ি বিঘা নিষ্কর জমি রামচন্দ্র পেয়েছিলেন
অধুনা বলাগড়ের সোমড়ায়। ইতিহাস বলে, সোমড়াতেই প্রাসাদ, দুর্গাদালান বানিয়েছিলেন রামচন্দ্র। তারপরেই ত্রিভুজা দেবীর
পুজো শুরু। সেসব প্রায় তিনশো কুড়ি বছরের অতীত কথা। প্রচলিত মতে, জমিদার রামচন্দ্র স্বপ্নাদেশেই ত্রিভুজাদেবীর পুজো শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে তৈরি বেদিতে এখনও দেবী পূজিতা হন। এখানে পুজো হয় শাক্ত মতে। তবে কিছু ক্ষেত্রে বৈষ্ণব আচারের প্রভাবও দেখা যায়। সেন পরিবারের সদস্যরা এখন সোমড়ায় থাকেন না। পুজোর সময়েই তাঁদের যাতায়াত। একদা এই পরিবারের এক সদস্যের ঘনিষ্ঠ ছিলেন স্থানীয় ইতিহাসের চর্চাকার অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, দুর্গাপুজো মূলত সামাজিক প্রভাবপুষ্ট পুজো। যে সময় সোমড়ায় রামচন্দ্রের বাড়িতে পুজো হয়, তখন বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থা ভালো ছিল না। দেবী দশহাতে অন্নগ্রহণ করলে সেই পরিবারের পরিস্থিতি বেগতিক হতে পারে, তাই হয়তো দেবী ত্রিভুজা।
আবার কোনও কোনও মতে, দেবীপুজোর তিনটি রীতি— শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব। সেই বিষয়টিকেও হয়তো ত্রিভুজে প্রকাশিত করা হয়েছে। হুগলিরই হংসেশ্বরী মন্দিরের গঠন রীতিতে তন্ত্রপ্রভাব দেখা যায়। ফলে ওই তত্ত্বও স্বীকৃতি পায়। আরও একাধিক আশ্চর্য দিক আছে এই পুজোর আয়োজনে। এখানে দেবীপুজোর সঙ্গে সঙ্গে মনসাপুজোর রীতি আছে। পুজোর চারদিনই নিত্যনতুন শিবমূর্তি গড়ে পুজো করতে হয়। এই বাড়িকে নিয়েই লেখা হয়েছে ‘চাঁদরানি’ গ্রন্থ। কথিত, একবার পুজোর সময় ডাকাত পড়েছিল। বাড়ির গৃহবধূ চাঁদরানি তিরধনুক নিয়ে প্রায় একাই প্রতিহত করেছিলেন ডাকাতদের। সেই গল্পই ধরা আছে গ্রন্থে। এখানকার দুর্গাদালানে তিনটির বদলে ছ’টি খিলান আছে। যা তদানীন্তন মন্দির রীতির ক্ষেত্রে বিরল। ইতিহাস সেই কবেই থমকে দাঁড়িয়েছে সোমড়ার দেবদেউলে। বহমান কেবল আমজনতার উমা। তাই সোমড়া মাতে কেবল পুজোর আনন্দে। ক্ষয়াটে খিলানের বাঁকে বাঁকে পাক খেয়ে পড়ে থাকে সোনালি অতীত, নিঃস্পন্দ। সোমড়ার সেনবাড়ির ত্রিভুজা দুর্গাপ্রতিমা। -নিজস্ব চিত্র