সংবাদদাতা, পুরাতন মালদহ: রাত হলেই দুষ্কৃতীদের দখলে চলে যায় পুরাতন মালদহ শহরের ইটভাটাগুলি। শহরের মধ্যেই বিস্তীর্ণ জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা ওই ভাটাগুলি অন্ধকার হলেই শুনশান হয়ে পড়ে। ভাটা ও সংলগ্ন এলাকায় রাত বাড়লেই বসে মদ সহ নানারকম নেশার আসর। অবাধে চলে জুয়ার ঠেক। সেইসঙ্গে চলে আরও নানা অসামাজিক কাজকর্ম। সম্প্রতি শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ডের একটি ইটভাটায় পাঁচ নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনার পরে ইটভাটা ও সংলগ্ন এলাকাগুলির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে শহরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। 
পুরাতন মালদহ শহরের বাসিন্দাদের দাবি, ইটভাটা সংলগ্ন এলাকাগুলিতে পুলিসের সেভাবে নজরদারি নেই। সেজন্যই সেখানে রীতিমতো ঠেক বসাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। দ্রুত তা নিয়ে পুলিস ও প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, দাবি তুলেছেন বাসিন্দারা। নাবালিকাদের যৌন নিগ্রহের ঘটনার পর শহরের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ করে সরব হয়েছে বিরোধীরা।  এবিষয়ে বিজেপির পুরাতন মালদহ নগর মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভাপতি গায়ত্রী পাল সরকার বলেন, আমাদের শহরে মেয়েদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। ইটভাটার সাম্প্রতিক ঘটনায় আমরা তারই প্রমাণ পাচ্ছি। পুলিস দ্রুত এব্যাপারে ব্যবস্থা নিক। পাশাপাশি শহরের সবকটি ইটভাটাতেই নজরদারি বাড়ানো হোক। 
পুলিস অবশ্য দাবি করেছে, শহরে নিয়মিত নজরদারি চালানো হয়। বাদ যায় না ভাটা সংলগ্ন এলাকাগুলিও। মালদহ থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা বলেন, কোনও ইটভাটায় কোনও অসামাজিক কাজ হলে পুলিস বসে থাকবে না। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের ধারাবাহিক নজরদারি চলে।
এদিকে, পুলিস আশ্বাস দিলেও ভাটাগুলিতে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপি নিয়ে সরব হয়েছেন সাধারণ বাসিন্দারাও। স্থানীয় এক ইটভাটার শ্রমিক হেমন্ত সোরেন বলেন, নবাবগঞ্জ এলাকায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। বিভিন্ন ভাটায় কাজ করতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের আনাগোনা আমরাও লক্ষ্য করেছি। সবকিছু দেখলেও আমরা ভয়ে মুখ বুজে থাকি। প্রতিবাদ করলে  হুমকির মুখে পড়তে হবে বলে কিছু বলি না।  শহরের একটি ভাটার মহিলা শ্রমিক  রেখা দাস বলেন, ভাটাগুলিতে আমার মতো প্রচুর মহিলা কাজ করেন। যা পরিস্থিতি দেখছি, তাতে আমাদেরও কোনও নিরাপত্তা থাকছে না। ভাটায় অনেক সময় অনেক অপরিচিত লোকের আনাগোনা দেখি। কে কখন কি মানসিকতা নিয়ে আসছে, সেটা তো আমরা আগে থেকে বুঝতে পারি না। প্রাশসনের পাশাপাশি ভাটার মালিকদেরও এব্যাপারে নজর দিতে হবে। পুরাতন মালদহের এমনই একটি এক ইটভাটার ম্যানেজার বলেন, সবসময় ভাটায় নজরদারি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। বেশিরভাগ ভাটাই একেবারে খোলামেলা। কখন কোন দিক দিয়ে কারা ঢুকে পড়ছে, সেটা আমরা কিভাবে আটকাব? তবে চোখের সামনে কোনও অসামাজিক কাজ হতে দেখলে, আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করি। 
঩যে এলাকায় ওই নাবালিকাদের যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে সেখানকার কাউন্সিলর নেপাল হালদার বলেন, ইটভাটাগুলোতে দুষ্কৃতীর দৌরাত্ম্য বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এধরনের ঘটনা যদি ঘটে তাহলে পুলিস ও প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলব।    
প্রসঙ্গত, পুরাতন মালদহ শহর লাগোয়া একাধিক ছোট-বড় ইটভাটা রয়েছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে ভাটাগুলি। স্থানীয় শ্রমিক, ভাটার কর্মচারী ছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষ সেসব জায়গায় খুব কমই যায়।  এলাকাগুলি নিরিবিলি বলে পুলিস ও স্থানীয় বাসিন্দাদের নজর এড়িয়ে সেসব জায়গায় অনেক অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। মদ, জুয়া, গাঁজার ঠেকও বসে বলে অভিযোগ।