বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
স্বাধীনতার পর প্রায় সাত দশক অতিক্রান্ত। দেশ স্বাধীন করার জন্য যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বিস্মৃতপ্রায় বর্তমান প্রজন্মের কাছে। সেইসব স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জীবন ইতিহাস তুলে ধরা একান্ত প্রয়োজন বলে অভিমত প্রবীণ নাগরিকদের। এমনই একজন শিবরাম চক্রবর্তীও। চাঁচলের পাহাড়পুরে ১৯০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেছিলেন শিবরাম। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল তাঁর। ছাত্রজীবনেই দেশপ্রেমের জোয়ার বইত শিবরামের মধ্যে। তখন স্বদেশী আন্দোলনের সময়। টগবগ করে ফুটছে দেশের যুব সম্প্রদায়ের আবেগ। স্কুলের মাস্টারমশাই প্রবন্ধ লিখতে দিলেন ‘বড় হয়ে কী হতে চাও?’, এই বিষয়ে। শিবরাম লিখলেন, দেশপ্রেমিক হতে চাই। অল্পবয়সে যা ছিল স্ফুলিঙ্গ, বয়স যত বেড়েছে, তত সেই দেশপ্রমের শিখা হয়ে উঠেছে আগুনের মতো লকলকে। চাঁচলে একবার সভা করতে এসেছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ। দেশবন্ধুর ভাষণ শুনে ভীষণ উদ্বুদ্ধ হয়ে পড়েন শিবরাম।
তাঁর ফেরার ট্রেনে লাফ দিয়ে উঠেও পড়েন তিনি। তখন তিনি সদ্য কৈশোরে পা দিয়েছেন। পরবর্তী জীবনেও তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে এসেছিলেন। কলকাতায় যাওয়ার পর তিনি বিজলি ও ফরওয়ার্ড পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছিলেন। যুগান্তর পত্রিকাতেই ব্রিটিশ বিরোধী লেখার জন্য তিনি জেলে যান। প্রথমে প্রেসিডেন্সি জেল ও তারপর তাঁকে বহরমপুর জেলে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিনি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সংস্পর্শে আসেন।
শিবরাম বহু দেশাত্মবোধক গল্প ও কবিতা রচনা করেন। তাঁর লেখা ‘গোখলে, গান্ধীজী এবং গোবিন্দবাবু’ নামক গল্পটিতে ইংরেজ সাহেবের বিরুদ্ধে গান্ধীজীর বীরত্ব সাহসিকতা ও অহিংস আদর্শের নিদর্শন তুলে ধরা হয়। এই গল্পে গান্ধীজির অহিংস আন্দোলনের ঘটনাকে তুলে ধরা হয়েছে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। কিন্তু তাঁর জীবনের এই দিকটি অনেকেরই অজানা। তিনি মূলত পরিচিত রসসাহিত্যিক হিসেবেই। আর সেজন্যই দীর্ঘনিশ্বাস ফেলছেন শিবরাম অনুরাগীরা।
চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী ইনষ্টিটিউশনে পড়াশুনা করেছেন শিবরাম। সেই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, শিবরাম চক্রবর্তীর স্বদেশপ্রেমের কথা ও স্বদেশের জন্য কারাবরণের কথা অবশ্যই আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা প্রয়োজন। শিবরাম চর্চার ব্যাপক ও বৃহত্তর আয়োজন করা সময়ের দাবি। সামসি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনোজ ভোজ বলেন, শিবরাম চক্রবর্তীকে আমরা রসসাহিত্যিক হিসেবেই জানি,কিন্তু তাঁর দেশপ্রেম ও স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশগ্রহণ ও কারাবরণের ইতিহাস অনেকেরই অজানা। এই বিষয়টি চর্চার দাবি রাখে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শিবরামের জীবনের এই দিকটি নিয়ে আরও আলোচনা হোক, সেটাই চাইব।