উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
তৃণমূল সুপ্রিমোর এই দাওয়াইয়ে এবার জেলায় শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল শেষ পর্যন্ত কমবে কি না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। এতদিন বিভিন্ন সময় কয়েকজন প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা মালদহে দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের আগে মালদহের দায়িত্ব পরিবহণমন্ত্রী তথা দুঁদে তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাতে দেওয়ার কথা মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু, এবার তিনিও সরাসরি মালদহ দেখবেন বলে দলনেত্রী জানিয়েছেন।
এতদিন পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা অন্যান্য নেতাদের মালদহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একটা বড় অংশ বিশেষ পাত্তা দিতেন না বলে অভিযোগ। ফলে তাঁরা মাঝেমধ্যেই একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেন। অন্যদের নিশানা করে নানা কথা বলতেন। এবার আর তা হবে না বলেই শাসকদলের নেতারা মনে করছেন। কারণ এবার যেকোনও ঘটনা খোদ নেত্রীর কানে দ্রুত এবং সরাসরি পৌঁছবে। ফলে কোনও বিরূপ মন্তব্য করার জন্য নেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনকী, তাঁদের শাস্তিও পেতে হতে পারে। ফলে এবার আলটপকা মন্তব্য করা থেকে জেলা তৃণমূল নেতারা বিরত থাকবেন বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, এর আগেও আমরা রাজ্যের নির্দেশমতো চলেছি। দলনেত্রী আমাদের অভিভাবক। তাঁর পরামর্শ এবং নির্দেশ মেনেই আগামী দিনে আমরা পথ চলব। নেত্রীর নির্দেশ মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণ করার পাশাপাশি সংগঠনকে জেলায় আরও মজবুত করা হবে।
মালদহ জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা ইংলিশবাজার পুসভার ভাইস চেয়ারম্যান দুলাল সরকার (বাবলা) বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি ও আদর্শ মেনে আমরা দল করি। তাঁর নির্দেশ আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। জেলায় দলকে শক্ত ভিতে দাঁড় করানোর জন্য যা যা করণীয় তা করবো। মৌসম আমাদের দলের জেলা সভানেত্রী। জেলার সাংগঠনিক কর্মসূচি পালন ও দল পরিচালনায় তাঁর গুরুত্ব অপরিসীম। বিষয়টি সকলেরই মাথায় রাখা উচিত।
উল্লেখ্য, মালদহ বরাবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি ছিল। কিংবদন্তী কংগ্রেস নেতা গনিখান চৌধুরী ছিলেন মালদহের শেষ কথা। বরকত সাহেবের মৃত্যুর পর জেলায় কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু হতে শুরু করে। তার ফলে এজেলায় রাজনৈতিক শূন্যস্থান তৈরি হয়। ওই শূন্যস্থান পূরণ করতে তৃণমূল উঠেপড়ে লাগে। কংগ্রেস থেকে বিভিন্ন নেতানেত্রীদের ভাঙিয়ে ঘাসফুল শিবিরে নিয়ে আসা হয়। তৃণমূলে নাম লেখানোর পর ওইসব নেতানেত্রী বিভিন্ন পদ পেতে থাকেন। বাম বা কংগ্রেসের হয়ে জয়লাভ করা একাধিক বিধায়কও তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন।
এদিকে জেলায় দলের কলেবর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের অন্তর্কলহও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আদি এবং নব্য তৃণমূলের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসমের বিরুদ্ধে সদ্য কংগ্রেসত্যাগীদের তৃণমূলে প্রাধান্য দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। দলে মৌসম-বিরোধী বলে পরিচিত একাধিক নেতা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হন। পুরনো দিনের তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত বাবলাবাবুই কিন্তু এর আগে মৌসমের দল পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। ইংলিশবাজার ও পুরাতন মালদহ পুরসভায় অনাস্থা কাণ্ড সামলাতে গিয়ে জেলা সভানেত্রীকে নাস্তানাবুদ হতে হয়। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই দুই পুরসভায় অনাস্থা আসে। এসময় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। ফলে মালদহের মতো গুরুত্বপূর্ণ জেলার দায়িত্ব ‘শক্ত হাতে’ দেওয়ার দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছিল।
দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সেই খবর পৌঁছে যায়। মঙ্গলবার জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকের আগে তৃণমূল নেতানেত্রীদের নিয়ে তিনি আলোচনায় বসেন। সেখানেই এবার থেকে মালদহে দল পরিচালনার বিষয়টি সরাসরি তিনি দেখবেন বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন। পাশাপাশি সভানেত্রী মৌসমকেও তিনি গুরুত্ব দেন।
জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলেন, এবার থেকে মালদহ তৃণমূলের খুঁটিনাটি খবর সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পৌঁছে যাবে। ফলে দলের নেতারা ভয়ে আর অন্যকে শায়েস্তা করার জন্য তলে তলে চেষ্টা করতে চাইবেন না। কারণ তা করলেই সেই খবর কোনও না কোনও ভাবে সুপ্রিমোর কানে যাবে এবং তাতে তাঁর রোষানলে পড়ার আশঙ্কা থাকবে।