বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
বন্দি-জীবন কাটাতে গণেশ সঙ্গী করেন বইকে। ভর্তি হন বি আর আম্বেদকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। শনিবার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৫৬ বছর বয়সি গণেশের হাতে ওঠে নয়া ডিগ্রি। আগের দু’টি বিষয়েও মাস্টার্স করেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অবশ্য এখানেই থেমে থাকতে চান না তিনি। জেলকুঠুরিতেই বসেই স্বপ্ন দেখেন পিএইচডি করার। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে তার গলায় তখন ঝুলছে উত্তরীয়। সেটা দিয়েই চোখের জল মুছে বললেন, জেল থেকে ছাড়া পেলে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই। আর চাই, ডক্টরেট ডিগ্রির স্বপ্নটাও পূরণ করতে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান অথবা মনোবিজ্ঞানে পিএইচডি করার শখ রয়েছে। পাশে দাঁড়ানো স্ত্রীর চোখেও তখন জল। পদার্থবিদ্যায় স্নাতক গণেশের যখন ২৭ বছর বয়স, তখনই খুনের অভিযোগে জেলে ঢুকতে হয় তাকে। পরে আদালতের নির্দেশে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তার। এর পর নিজের জীবনকে অন্য খাতে বইয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা শুরু করেন গণেশ।
তবে চেরলাপল্লি জেলে তিনিই একমাত্র মেধাবী বন্দি নন। গণেশের সঙ্গে ওই জেলের আরও ১৩ বন্দি বি আর আম্বেদকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পেয়েছেন। তাঁদেরই একজন ৩৮ বছরের আমির মহম্মদ জামাল। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন তিনি। বললেন, ‘আমার জীবনে এটা বিশেষ দিন। বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন।’ তার কথায়, ‘শিক্ষার দিক দিয়ে আমাদের পরিবার সমৃদ্ধ। বাবা ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি ভাষার অধ্যাপক ছিলেন। আমিও বিটেক করেছি। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরিও করতাম। বাবার ইচ্ছাপূরণে পিএইচডি করার স্বপ্ন দেখি আমি।’ জেলে তিনি এখন পুরোদস্তুর শিক্ষক। মনোবিজ্ঞান পড়ান।
গণেশ ও জামাল যখন তাঁদের ডিগ্রিকে পরবর্তী উচ্চশিক্ষার জন্য কাজে লাগাতে চান, তখন একই জেলে বন্দি ২৯ বছরের ডি সন্তোষ কুমার স্বপ্ন দেখেন, জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর এই ডিগ্রি যদি তাঁকে একটা চাকরির সুযোগ করে দেয়। খুনের দায়ে ১৮ বছর বয়সে জেলে ঠাঁই হয় তার। তারপর সংশোধনাগারে বসেই শেষ করেছেন পড়াশোনা। বললেন, ‘আমি প্যারোলের জন্য আবেদন করেছি। জেলের বাইরে বেরতে পারলে বাচ্চাদের তেলুগু ভাষা শিখিয়ে পেট চালাব।’
জেলবন্দি হিসেবে তাঁরাই দেশে প্রথম ব্যাচ, যাঁরা মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করলেন। এমনটাই দাবি কর্তৃপক্ষের। কোর্স কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক বীণা ছিন্তালাপুরী বলেন, ২০১৮ সালে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি করার জন্য প্রস্তাব রাখা হয় তেলেঙ্গানার জেলবন্দিদের কাছে। সেসময় কারাদপ্তরের ডিজির দায়িত্বে থাকা ভি কে সিং জেলের মধ্যেই আগ্রহীদের জন্য পুরোদস্তুর ল্যাব তৈরি করে দেন। অন্য জেল থেকেও আগ্রহী বন্দিরা ওই ল্যাবে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ নিতে চারমাসের জন্য এসেছিলেন চেরলাপল্লি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।