মাদুরাই: ওভেনে প্রমাণ সাইজের তাওয়া। চারিদিকে ময়দার লেচি পর পর সাজানো। তাওয়ায় পড়ল হাল্কা তেল। আর সেই তেলে ময়দার লেচি এপাশ-ওপাশ সেঁকে বানানো হচ্ছে পরোটা। মাদুরাইয়ের বিখ্যাত ‘এন্নাই পরোটা’। স্বাদ ও গন্ধে অতুলনীয়। সুন্দরেশ্বর মন্দিরে পুজো দিতে আসা পর্যটকদেরও মুহূর্তে উন্মনা করে তোলে। শহরের মাতুতবাণী বাস টার্মিনাস থেকে ঢিলছোঁড়া দূরত্বে টেম্পল সিটি হোটেল। এন্নাই পরোটার জন্য যার খ্যাতি মাদুরাইয়ের বাইরেও। কোভিড-ভীতিতে শহরে পর্যটকদের আনাগোনা কমলেও হোটেলের বিক্রিবাটায় ভাটা নেই। বরং বেড়েছে। পেছনের রহস্যটা ঠিক কী? একগাল হেসে রেস্তোরাঁর মালিক পুভালিঙ্গমের জবাব—‘মাস্ক পরোটা’। যার জাদুমন্ত্রে বুঁদ চেন্নাইয়ের আমজনতা। দেখতে অবিকল ত্রিস্তরীয় মাস্ক। আদতে মুচমুচে পরোটা। মাস্কের আদলে মাদুরাই পরোটাকে নয়া চেহারায় হাজির করেছেন পুভালিঙ্গম। উদ্দেশ্য খুব স্পষ্ট। খাবারের পাতে যেন খিদে মেটানোর পাশাপাশি আয়নার কাজও করে। অর্থাৎ, মাস্ক ছাড়া যে সকল খাদ্য রসিকরা দোকানে ঢুকছেন, পরোটার প্লেট সামনে আসামাত্র তাঁরা যেন স্বাস্থ্যবিধির সহজ পাঠটি মনে গেঁথে নেন। পরোটা খেয়ে মাস্কে মুখ ঢাকার বোধটুকু জন্মায়। পুভালিঙ্গমের কথায়, ‘চেন্নাইয়ের করোনা পরিস্থিতি সম্প্রতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন নতুন রেকর্ড গড়ছে। কিন্তু আমজনতার হুঁশ ফিরছে না। এখনও মাস্ক ছাড়া খোলা বাজারে ভিড় জমাচ্ছেন কাতারে কাতারে মানুষ। বারণ সত্ত্বেও তাঁর হোটেলে মাস্কবিহীন ক্রেতাদের আনাগোনা আটকাতে পারছি না। বাধ্য হয়ে এই গিমিকের আশ্রয় নিতে হয়েছে। তাতে লোকে সচেতন হচ্ছে। বাড়ছে ব্যবসার পসারও।’ ইতিমধ্যে ট্যুইটারে খবরটি ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঝড়ের গতিতে অনলাইনে অর্ডার আসাও শুরু হয়েছে বলে জানালেন তিনি।
পরোটার এই নয়া সংস্করণটি দেখতে কেমন? পুভালিঙ্গম জানাচ্ছেন, মাস্কের আকার দিতে গিয়ে প্রথাগত পরোটার বিন্যাসে অনেকটাই বদল ঘটাতে হয়েছে। ময়দার লেচি এমনভাবে বেলতে হয়েছে, যাতে মাঝের অংশটি ফ্ল্যাট ও দুই ধার আংটার মতো দেখায়। কলাপাতায় সাজানো পরোটা চোখে পড়ামাত্র বাজারচলতি মাস্ক বলে ভুল হতেই পারে। সেই একই গড়ন। এমনকী ত্রিস্তরের পর্দাও ময়দার ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠেছে। কিন্তু হাতে নিলেই ভুল ভেঙে যেতে বাধ্য! জনহিতার্থে আকার বদলালেও গুণমানের সঙ্গে কোনও আপোষ করেননি তিনি। সেই একই বাদামি আভাযুক্ত সাদাটে মুচমুচে পরোটা। মুখে পুরলেই ভ্যানিশ। আর সঙ্গে যদি টকঝাল সাম্বার আর নারকোলের চাটনি আলতো করে মাখানো যায়, তাহলে সুন্দরেশ্বর মন্দিরের পথ ভুল হতে বাধ্য!