সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ২ এপ্রিল: লকডাউন ১৪ এপ্রিল উঠে গেলেও সাধারণ মানুষের গতিবিধি ও সামাজিকতার বিন্যাস স্বাভাবিক হবে না। মানুষের গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, গণজমায়েত নিষিদ্ধই থাকবে, বাইরে বেরনোর ক্ষেত্রেও প্রচুর বাধা নিষেধ আরোপ করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। কীভাবে লকডাউনের এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার পর সতর্ক ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব, সেটা স্থির করতে রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে যৌথভাবে কৌশল নির্ধারণ করার পথে হাঁটছে কেন্দ্র। আজ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এক ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এরকমই আভাস দিয়েছেন। তিনি রাজ্যগুলিকে বলেছেন, লকডাউনের ফলে ইতিবাচক সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও দেশে একবার চলে গিয়ে করোনা ভাইরাস আবার ফিরে এসেছে। তাই আজ মুখ্যমন্ত্রীদের কাছে মোদি পরামর্শ চেয়েছেন, যাতে কেন্দ্র ও রাজ্য একজোট হয়ে কীভাবে লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতির মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। মোদি আজ বলেছেন, করোনার জন্য পৃথক হাসপাতাল নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যগুলিকে। আজ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই ভিডিও বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী অমিত শাহ, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধনও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকের পর মনে করা হচ্ছে, পরিস্থিতির খুব অবনতি না হলে ২১ দিনের লকডাউন সময়সীমা আরও বাড়ানোর কথা সম্ভবত ভাবা হচ্ছে না। তবে সবটাই নির্ভর করছে আগামী দু’সপ্তাহের করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতির উপর। আমেরিকা ও ইউরোপে করোনার প্রকোপ সামান্যতম নিয়ন্ত্রিত হয়নি। বরং আমেরিকার অবস্থা উত্তরোত্তর উদ্বেগজনক হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গতকালই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এভাবে চললে আমেরিকায় ২ লক্ষাধিক মৃত্যু হতে পারে। স্বয়ং ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আগামী দু’সপ্তাহ প্রবল বেদনাদায়ক পরিস্থিতি অপেক্ষা করে আছে। ট্রাম্পের সুরেই আজ মোদি বলেছেন, বিশ্বের অবস্থা চরম উদ্বেগজনক। তাই রাজ্যগুলিকে আজ মোদি বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব ও লকডাউন কঠোরভাবে প্রযুক্ত রাখতে হবে। রোগীদের চিহ্নিত করা, পরীক্ষা করা এবং বিচ্ছিন্ন করে রাখা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় নিয়ে যেতে হবে বলে আজ প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীদের বলেছেন। তিনি বলেছেন, লকডাউন এবং টেস্টিং, এই দু’টিকে প্রচণ্ড গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করুন আপনারা। কারণ এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হল, নাগরিকদের প্রাণ রক্ষা করা।
আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন ন’টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওই বৈঠক থেকে বেরিয়েই অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ট্যুইট করে দেন যে, লকডাউনের মেয়াদ আর বাড়ছে না। কিন্তু পরে তিনি সেই ট্যুইট বার্তা মুছে দেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রী আজ সরাসরি ‘লকডাউন আর বাড়ছে না’ এরকম মন্তব্য করেননি। আবার বাড়ছে এরকম আভাসও দেননি। উল্লেখ্য, আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তুলনামূলকভাবে ভারতের প্রশংসা করে বলেছে, ভারত এরকম নিয়ন্ত্রণ যদি আগামীদিনেও দেখাতে পারে, তাহলে সেটা অত্যন্ত ইতিবাচক। কয়েকদিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের ক্যাবিনেট সচিব রাজীব গৌবা বলেছিলেন, লকডাউনের মেয়াদ আবার বাড়ানো হবে এরকম কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এই জল্পনাকে তিনি গুজব ও অসত্য প্রচার হিসেবে তকমা দিয়েছিলেন। আজ প্রধানমন্ত্রীও সেই সুরেই লকডাউনের পর ভারতের আগামীদিনের পথ হাঁটার ইঙ্গিত দিতে চাইলেন। তবে আজ বৈঠকে দিল্লির নিজামুদ্দিনে তবলিগি জামাতের ধর্মীয় সমাবেশ থেকে যেভাবে রাজ্যে রাজ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেই সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মোদি বলেছেন, এই শঙ্কার কারণেই আরও বেশি মানুষের পরীক্ষা ও চিহ্নিতকরণ প্রয়োজন।
এদিকে ২১ দিনের লকডাউনে রাজ্যগুলির আর্থিক ভাণ্ডার শূন্য হতে চলেছে। এই সমস্যার কথা আজ প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই বলেছেন প্রধানমন্ত্রীকে। প্রসঙ্গত গতকালই এই সমস্যার কথা উল্লেখ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই কেন্দ্রের কাছে ২৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ চেয়েছেন। আজ সেই একই সুরে অন্য মুখ্যমন্ত্রীরাও প্যাকেজের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করেননি। ১১ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ রাজ্যগুলির জন্য দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মোদি। ছবি: পিটিআই