নয়াদিল্লি, ১৮ নভেম্বর: মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের ‘পাওয়ার প্লে’ অব্যাহত। তৎপরতা তুঙ্গে সব শিবিরেই। প্রস্তাবিত সূচি অনুযায়ী সোমবার সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করেন শারদ পাওয়ার। বিকেলের পর কংগ্রেস সভাপতির ১০ জনপথের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এনসিপি সুপ্রিমো। পরে পাওয়ার বলেন, মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তাঁকে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এ কে অ্যান্টনিও। কংগ্রেস ও এনসিপি নেতাদের মধ্যে আরও কথা হবে। এর পরেই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, শিবসেনার সঙ্গে জোট করে সরকার গড়ায় সোনিয়া গান্ধীর আপত্তি রয়েছে কি না। জবাবে পাওয়ার বলেন, সরকার গঠন নিয়ে আমাদের বৈঠকে কোনও কথাই হয়নি। বৈঠকে শুধুমাত্র কংগ্রেস ও এনসিপির বিষয়ে কথা হয়েছে। উল্লেখ্য, শিবসেনা দাবি করে আসছে, তাদের সঙ্গে ১৭০ জন বিধায়কের সমর্থন রয়েছে। এবিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপি প্রধান বলেন, এই ১৭০ সংখ্যাটা নিয়ে আমার কিছু জানা নেই। এবিষয়ে শিবসেনার কাছে জানতে চান। ঘটনাচক্রে মহারাষ্ট্রে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস বিকল্প জোট নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উপর্যুপরি বৈঠক হয়েছে তিন দলের তরফেই। এনসিপি প্রধানের এদিনের বক্তব্যের পর প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভোল বদল করলেন পাওয়ার? এরই মধ্যে জল্পনা বাড়িয়েছে বিজেপির শরিক নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আটওয়ালের একটি মন্তব্য। তিনি দাবি করেন, শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর কাছে প্রস্তাব দিয়েছি, ৩ বছর বিজেপি ও ২ বছর শিবসেনার হাতে থাকুক মুখ্যমন্ত্রী পদ। জবাবে রাউত জানিয়েছেন, বিজেপি রাজি হলে শিবসেনা ভেবে দেখবে। আমি এবিষয়ে বিজেপির সঙ্গে আলোচনা করব। ঘটনা হল, একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকলেও মুম্বই পুরসভার মেয়র ও ডেপুটি মেয়র নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চলেছে শিবসেনা। শিবসেনার বিরুদ্ধে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি। তাহলে কি শেষ পর্যন্ত ফের বিজেপি-শিবসেনা কাছাকাছি আসতে চাইছে? আটওয়ালের মন্তব্য সেই জল্পনাও উস্কে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটার নাম নেই।
পাওয়ারের ভোল বদলের ইঙ্গিত মেলে এদিন সকালে তাঁর আরও একটি মন্তব্যে। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ‘মারাঠা স্ট্রংম্যান’ বলেন, বিজেপি-শিবসেনা একসঙ্গে ভোটে লড়েছিল। আমরা (এনসিপি-কংগ্রেস) লড়েছি একত্রে। নিজেদের রাস্তা খুঁজে নেওয়া উচিত ওদের (বিজেপি-শিবসেনা প্রসঙ্গে)। আমরা আমাদের রাজনীতি করব। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস সম্ভাব্য জোট নিয়ে প্রশ্নের জবাবে পাওয়ারের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘আচ্ছা?’ ঢাকঢোল পিটিয়ে বারবার এত বৈঠকের পর যেন কিছু জানাই নেই তাঁর। ঘটনাচক্রে এদিন শিবসেনার তরফে জানানো হয়, উদ্ধব থ্যাকারে ২৪ নভেম্বর তাঁর প্রস্তাবিত অযোধ্যা সফর বাতিল করছেন। নিরাপত্তার কারণে এই সিদ্ধান্ত বলে জানানো হলেও এর মধ্যে অন্য বার্তা খুঁজছিল রাজনৈতিক মহল। মনে করা হচ্ছিল, সোনিয়ার সঙ্গে পাওয়ারের বৈঠকের আগে হিন্দুত্ব নিয়ে সুর নরমের বার্তা দিতে চাইছেন শিবসেনা প্রধান। কিন্তু পরে সম্ভাব্য বিকল্প জোট নিয়ে পাওয়ারের ভোল বদল নতুন করে ধোঁয়াশা তৈরি করল। এরই মধ্যে এদিন দুপুরে রাজ্যসভায় পাওয়ারের এনসিপির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ফলে মহারাষ্ট্রের এই ‘পাওয়ার প্লে’ যে শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়াতে চলেছে, অধীর আগ্রহে চোখ রাখছে গোটা দেশ।