নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল। সর্বত্রই যেন উৎসবের মেজাজ। নির্ঝঞ্ঝাট, রক্তপাতহীন নির্বাচন। কোথাও কোনও বড় গণ্ডগোলের অভিযোগ নেই। রবিবার দার্জিলিং থেকে পুরুলিয়া, বুথের লাইনে দাঁড়িয়ে হাজার হাজার মানুষ ভোট দিলেন নির্বিঘ্নে। দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কিন্তু তাতে কী? বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বুথমুখী হয়েছেন ভোটাররা। বিরোধীদের মুখেও কোথাও শোনা যায়নি ভোটদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। এদিন পাহাড়ে যে ভোট হচ্ছে, তা টেরই পাননি বেড়াতে আসা পর্যটকরা। ভোটের কথা শুনে তাঁদের কার্যত আকাশ থেকে পড়ার দশা। অবাক হয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন, ‘এখানে ভোট চলছে নাকি!’
এদিন পাহাড়ে জিটিএ এবং শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের নির্বাচন ছিল। এছাড়া কলকাতা সংলগ্ন দুই জেলায় পাঁচটি এবং দক্ষিণবঙ্গের একটি পুরসভা মিলিয়ে মোট ছ’টি ওয়ার্ডে নির্বাচন ছিল। সাত বছর পর শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোট হল। এখানে প্রায় ৫ লক্ষ ২৭ হাজার ভোটার রয়েছেন। বিকেল ৩টে পর্যন্ত প্রায় ৬২ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকাল থেকেই শিলিগুড়িতে বৃষ্টি হয়েছে। কাদাজল মাড়িয়ে মানুষ উৎসাহের সঙ্গে ভোট দিয়েছেন। কয়েকটি জায়গায় ইভিএম বিভ্রাটে কিছুটা ছন্দপতন ঘটে। এক-দু’টি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিতেই মিটেছে ভোটগ্রহণ পর্ব।
এদিন পাহাড়ে জিটিএ ভোটও হয়েছে উৎসবের মেজাজেই। এই সময় পাহাড়ে অনেক পর্যটক থাকলেও কিছু টের পাননি অনেকে। জিটিএতে মোট ৪৫টি আসন। মূল লড়াই হচ্ছে অনীত থাপার ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা এবং অজয় এডওয়ার্ডের হামরো পার্টির মধ্যে। তৃণমূল কংগ্রেসও এখানে ১০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জিটিএ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের নেতা বিমল গুরুং, রোশন গিরিরা ভোটদানে বিরত ছিলেন। বিকেল ৪টে পর্যন্ত এখানে ভোট পড়েছে প্রায় ৫৬.৫ শতাংশ।
পুরুলিয়ার ঝালদা পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনও শান্তিতেই মিটেছে। কংগ্রেস কাউন্সিলার তপন কান্দু হত্যার জেরে এই উপনির্বাচন। তবে সকাল থেকেই কংগ্রেস, বিজেপি ও তৃণমূল প্রার্থীকে একসঙ্গে খোশমেজাজে দেখা গিয়েছে। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়াও করেন তাঁরা। প্রয়াত কাউন্সিলারের স্ত্রী সারাদিন রাস্তায় থেকে ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত এখানে ৮০.৮৬ শতাংশ ভোট পড়েছে এই কেন্দ্রে। শহরতলির পানিহাটি পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কাউন্সিলার অনুপম দত্ত দুষ্কৃতীদের গুলিতে নৃশংসভাবে খুন হন। এদিন এই ওয়ার্ডে উপনির্বাচন মিটেছে অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে। গত পুরসভা নির্বাচনে দুই বামফ্রন্ট প্রার্থী এবং একজন বিজেপি প্রার্থী মারা যাওয়ায় দমদম পুরসভার ৪, ভাটপাড়া পুরসভার ৩ এবং চন্দননগর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে এদিন ভোটগ্রহণ করা হয়। তেমন বড় কোনও গোলমালের খবর পাওয়া যায়নি। আইনি জটিলতা ও মামলার জেরে গত পুরসভা নির্বাচনে দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২৯ নম্বর নম্বর ওয়ার্ডে ভোট হয়নি। এখানেও ভোট হয়েছে নির্ঝঞ্ঝাট, রক্তপাতহীন।

 দার্জিলিংয়ে জিটিএ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পর। - নিজস্ব চিত্র