বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
মোদি সরকারের অনুষ্ঠান। তাতে আমন্ত্রিত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু অগ্নিকন্যা মমতা বলতে উঠতেই শুরু হল নানাভাবে বাধা দেওয়া। প্রথমে ‘না, না...’, তারপরই ‘জয় শ্রীরাম...’। মুখ্যমন্ত্রী ভাষণ শুরু করার জন্য উঠতেই বারংবার ‘না না’ কান ঝালাপালা করা চিৎকার যেমন শোনা গেল, তেমনি ‘মোদি মোদি’ চিৎকারে তাঁর কণ্ঠস্বর ঢেকে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। দেখে মনে হচ্ছিল, পুরো ঘটনাটাই পরিকল্পিত। সবচেয়ে লজ্জার বিষয় হচ্ছে, ভিআইপিদের বসার নির্দিষ্ট জায়গা থেকেও একাধিকবার আপত্তিকর স্লোগান ওঠে। তাহলে কি দলের লোকেদেরই বেছে বেছে সরকারি অনুষ্ঠানের কার্ড বিলি করা হয়েছে? ঠিক যখন এই ঘটনা ঘটছে, তখন মঞ্চে উপবিষ্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকার, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী প্রহ্লাদ প্যাটেল। মত ও আদর্শের ফারাক থাকলেও রাজ্যের নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি এক আপসহীন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে অপমান করা হচ্ছে দেখেও কেউ কিন্তু কোনও প্রতিবাদ করলেন না। এমনিতে কথায় কথায় ট্যুইট করেন রাজ্যপাল। তিনিও এই ইস্যুতে বিস্ময়করভাবে নীরব। প্রধানমন্ত্রীকেও খুব একটা বিচলিত হতে দেখা গেল না। এটাই কি তবে সৌজন্যের নজির? বিশেষত বহু আন্দোলনের কাণ্ডারী বাংলার জননেত্রী এক মহিলার অসম্মান দেখেও এই আশ্চর্য নীরবতা কিসের ইঙ্গিত?
এই হট্টগোলের মধ্যে ভাষণ না দিয়েই বসে পড়েন মমতা। গত চার দশক ধরে এই বাংলায় প্রতিবাদের অপর নাম তিনি। তাই ভাষণ না দিলেও জোরালো আপত্তি জানাতে তিনি কসুর করেননি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সরকারি অনুষ্ঠান। কোনও রাজনৈতিক দলের প্রোগ্রাম নয়। এখানে আমন্ত্রণ জানিয়ে বেইজ্জত করা আপনাদের শোভা পায় না। তাই আমি আর কিছুই বলব না।’ তবে নেতাজির এই অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতাকে বেছে নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী এবং তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি মুখ্যমন্ত্রী। বুঝিয়ে দিয়েছেন, গণতন্ত্রের কদর বিজেপি না করুক, বাংলা করে। ভবিষ্যতেও করবে। মমতাকে প্রকাশ্যে প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে অপমানিত হতে দেখে গোটা বাংলার মানুষ ফুঁসছে। নিছক সৌজন্য দেখাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন। বাংলার সংস্কৃতিই এই সৌজন্যের কথা বলে। তার উপর দিনটা ২৩ জানুয়ারি। বাংলা তথা ভারতের শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকের জন্মদিন। কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রক গোটা অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী। দু’জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তবু গোটা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বর দেখে দুপুর থেকেই মনে হচ্ছিল, যেন গেরুয়া দলের কোনও জনসভা। চারদিকে বিজেপির পতাকা। কপালে লাল তিলক লাগানো ‘কারিয়াকর্তা’দের ভিড়। দেখে মনে হচ্ছিল না, এরা কেউ নেতাজির টানে এসেছেন। তবু সৌজন্য দেখিয়েই প্রধানমন্ত্রীর মঞ্চে ছিলেন মমতা। সকালে শ্যামবাজার থেকে রেড রোড পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ কিলোমটার পদযাত্রার ক্লান্তি সত্ত্বেও তিনি না গিয়ে পারেননি। কিন্তু অপমানিত হতে হল। আসলে এই অপমান শুধু তাঁর নয়, রামভক্তদের হাতে আজ বাংলার অন্তরাত্মাই গুরুতর আহত!