বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
লকডাউনে কাজ হারিয়েছেন তার বাবা। একটি বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন তিনি। সংসার চালাতে মা কাজ করছেন বাড়ি বাড়ি। পরিবারের আর্থিক সংকট চরমে। বাবা-মা’কে সহযোগিতা করতে সাগর মেলায় এই প্রথম জ্যারিকেন কাঁধে ঝুলিয়েছে সমর। পুণ্যার্থীদের ভিড়ের উদ্দেশ্যে তার কাতর আবেদন—‘গঙ্গাজল ভরতে একটা নিন। দাম মাত্র ১০ টাকা।’ কেউ নিচ্ছেন, কেউ নিচ্ছেন না। কেউ আবার দর কষাকষি করে চলে যাচ্ছেন। তাতে সমরের অবশ্য রাগ-অভিমান নেই। হাসি মুখে সবার কাছে তার সেই একই আর্জি—একটা তো নিন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র সমর। সাগরের একটি স্কুলে পড়ে সে। বেশ কিছুদিন হল ক্লাস শুরু হয়েছে। অনলাইনে ক্লাস। টাকার অভাবে স্মার্টফোন কিনে দিতে পারেননি বাবা। মা’কে বলেও কোনও কাজ হয়নি। ফলে ক্লাস করতে পারছে না সে। সহপাঠীদের বাড়ি গিয়ে ক্লাসের খুঁটিনাটি খাতায় লিখে আনছে। কিন্তু বুঝতে পারছে না কিছুই। জ্যারিকেন বেচতে বেচতে সমর বলছিল, ‘বাংলা, ইতিহাস, ভুগোল মুখস্থ করে হোম টাস্ক সম্পূর্ণ করছি। কিন্তু অঙ্ক-বিজ্ঞান-ইংরেজি মাথায় ঢুকছে না। ক্লাস করতে পারছি না বলেই এই সমস্যা। এবার একটা স্মার্টফোন না হলেই আর চলছে না।’
সাগর মেলা মেরেকেটে তিন দিনের। তার উপর এবার কোভিডের দৌরাত্ম্যে ভিড় কম। তাতে আর কত বিক্রি হবে পুণ্যার্জনের জল ভরার জ্যারিকেন? সেই টাকায় কি কেনা যাবে ৮-১০ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্টফোন? সমর বলছিল, ‘এখন পর্যন্ত মাত্র ৫০টি জ্যারিকেন বিক্রি করেছি। আয় হয়েছে সাকুল্যে ৫০০ টাকা। আজ কিছুটা হয়তো বেশি হবে।’ কিন্তু জ্যারিকেন বিক্রির টাকায় আর যাইহোক স্মার্টফোন কেনা বোধহয় হবে না সমরের। নিজেও মানছে সে কথা। তাঁর আক্ষেপ, ‘বাবার চাকরিটা থাকলে সমস্যা হতো না।’
মকর সংক্রান্তিতে পুণ্যার্জনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাগরে আসেন বহু ভক্ত। তাঁদের অনেকেই জল ভরে বাড়ি নিয়ে যান। কিন্তু কোন পাত্রে জল ভরবেন তা নিয়ে সমস্যায় পড়েন পুণ্যার্থীরা। তার মোকাবিলায় জ্যারিকেন কাঁধে মেলায় ঘোরাফেরা করেন স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা। সমরও তাদের একজন। তার সঙ্গে সবার পার্থক্য শুধু একটাই—পড়াশোনার জন্য ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র শরিক হতে চায় সে। অন্যদের বাড়তি উপার্জন। -নিজস্ব চিত্র