বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
দেবেন্দ্রবাবু ছিলেন সিপিএমের বিধায়ক। এক বছর আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। গতকাল সাত সকালে বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার দূরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার নবান্নে ময়নাতদন্তের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ‘আত্মহত্যা’র সম্ভাবনার কথাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র দপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিসের প্রাথমিক তদন্তেও হাতে আসা বেশ কিছু তথ্যে ‘আত্মহত্যা’র তত্ত্ব জোর পাচ্ছে।
কিন্তু কেন দেবেন্দ্রবাবু ‘আত্মহত্যা’ করতে গেলেন? বিভিন্ন সূত্রে পুলিস জেনেছে, বিধায়কের বিপুল পরিমাণ আর্থিক লেনদেন ‘আত্মঘাতী’ হওয়ার পিছনে অনুঘটকের কাজ করেছে। প্রোমোটারি ও চালকলের ব্যবসার জন্য মালদহের দুই ব্যক্তিকে প্রায় দু’কোটি টাকা দিয়েছিলেন দেবেন্দ্রবাবু। তাদের একজন মামুদ আলি। অন্যজন নিলয় সিংহ। ‘সুইসাইড নোট’-এ এই দু’জনের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। সেখানে তাদের ছবিও সাঁটানো ছিল। চিরকুটটি বিধায়কের জামার পকেটে মেলে। তার ভিত্তিতেই নিলয় সিংহকে গ্রেপ্তার করেছে মালদহ জেলা পুলিস। মামুদ আলি পলাতক। পুলিস জানতে পারে, বিধায়কের পুরো টাকাটাই গায়েব করে দেয় দুই অভিযুক্ত। ইদানীং তারা দেবেন্দ্রবাবুর ফোন ধরাও বন্ধ করে দিয়েছিল। বিশ্বাসে আঘাত পেয়ে অবসাদে ভুগছিলেন তিনি। সোমবার রাতে রায়গঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন বিধায়কের স্ত্রী চাঁদিমা রায়। তাতেও নাম রয়েছে মালদহের ওই দুই ব্যক্তির। বিধায়কের দেহ উদ্ধারের পরই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় রাজ্য। জোরকদমে তদন্তের কাজ শুরুও করে দিয়েছে সিআইডি। সূত্রের খবর, প্রাথমিক পর্যায়ে বিধায়কের আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। ইতিমধ্যেই বিধায়কের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থের হদিশ পেয়েছেন তাঁরা। জানা গিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টে রয়েছে ৪ কোটি ৯৭ লক্ষ ৮১ হাজার ৫৮৩ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ ১ হাজার ৬৫২ টাকা ব্যাঙ্ক লোন বাবদ পাওয়া। তার সমস্ত কাগজপত্রও রয়েছে। বাকি ২ কোটি ৬০ লক্ষ ৫৯ হাজার ৯৩১ টাকার উৎস কী, তা জানা যায়নি। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের সঙ্গে বিধায়ক মৃত্যুর কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
তবে ‘বিধায়ককে খুনে’র তত্ত্বেই অনড় বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চাইছে সরকার। রাজ্যের পুলিস-প্রশাসনের উপর আমাদের ভরসা নেই।’ এদিন দিল্লিতেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়সহ আরও কয়েকজন বিজেপি নেতা। বিধায়কের খুনের ঘটনায় কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি করেন তাঁরা। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করেও সিবিআই তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন বিজেপি নেতারা। বিজয়বর্গীয় বলেছেন, ‘আমরা সিবিআই তদন্ত চাই।’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, গত তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ১০৫ জন নেতা, কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
গেরুয়া শিবিরের এই রাজনীতিকে নিন্দনীয় বলে পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছে শাসক শিবির। এদিন হাওড়ায় এক অনুষ্ঠানে তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘দেবেন্দ্রনাথবাবুর মৃত্যুতে একজন সহকর্মীকে হারালাম। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে তিনি হয়তো অবসাদে ভুগছিলেন। অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। কিন্তু তা নিয়ে বিজেপি যে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে, তা নিন্দনীয়।’