বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, আইলা বিপর্যয়ের পর বর্তমানে ব্রাহ্মীর হাত ধরেই উপার্জনের বিকল্প পথের খোঁজ পেয়েছেন নামখানা এবং সাগরের অসংখ্য চাষি। বাংলার ব্রাহ্মীচাষের ভবিষ্যৎ নিয়ে অত্যন্ত উচ্ছ্বসিত রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের ভেষজ উদ্ভিদ পর্ষদের অধিকর্তা ডাঃ প্রশান্ত সরকার বলেন, শুধুমাত্র এই দুই এলাকার ১২০০ বিঘা জমিতে হচ্ছে ব্রাহ্মী চাষ।
চাহিদা আছে বলেই তো চাষ হচ্ছে। কিন্তু, বাংলার ব্রাহ্মী চাইছে কারা? ডাঃ সরকার বলেন, চাইছে আমেরিকা, চাইছে জাপান, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলি। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় চাষ করা ব্রাহ্মীশাক চলে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু, বিজয়ওয়াড়া এবং মুম্বইয়ের বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতার সংস্থার কাছে। তারা ‘ব্যাকোসাইড এ’ নিষ্কাষণ করে পাঠিয়ে দিচ্ছে বিদেশে। সারা দেশের ভেষজ গাছগাছাড়ি নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালানো এবং চাষিদের সাহায্য করা নামকরা সংগঠনের কর্তা পিনাকপ্রতিম দাঁ বলেন, বাংলার ব্রাহ্মী যে ভারতসেরা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই। বিষয়টি শুধু গবেষণাপত্রেই প্রকাশিত হয়নি, বিভিন্ন ওষুধ নির্মাতা সংস্থাও তাদের গবেষণাগারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগৃহীত ব্রাহ্মী নিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছে, ‘ব্যাকোসাইড এ’ সবচেয়ে বেশি রয়েছে এখানকার ব্রাহ্মীতেই।
এখন দেখা যাক কী এমন ওষধিগুণ রয়েছে ব্রাহ্মীশাকে, যে কারণে এটি চাষ করার ধুম পড়ে গিয়েছে? এ বিষয়ে সোমবার বিশিষ্ট আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ডাঃ লোপামুদ্রা ভট্টাচার্য বলেন, ব্রাহ্মীর স্মৃতিবর্ধক গুণ নিয়েই সকলে এতটাই উচ্ছ্বসিত যে বাকি গুণগুলি নিয়ে তেমন চর্চা হয় না। অথচ ব্রাহ্মীশাক অশান্ত মানুষের উত্তেজনা প্রশমন করে। ঘুম বাড়ায়। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদানের ‘সিডেটিভ’ গুণপনা আছে। অবসাদ কাটাতেও ব্রাহ্মীর জুড়ি মেলা ভার। আর ‘ব্যাকোসাইড এ’ এবং ‘ব্যাকোসাইড বি’ থাকার জন্য স্মৃতিবর্ধক হিসেবে এর খ্যাতি তো বিশ্বজোড়া।
সূত্রের খবর, বর্তমানে নামখানায় ১৫০ একর এবং সাগরে ২৫০ একর জমিতে ব্রাহ্মীচাষ হচ্ছে। আইলার জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এইসব জায়গায় মানুষ লাভজনক বিকল্প চাষ খুঁজছিলেন। ধান চাষ করে যেখানে এই তল্লাটের চাষিদের বিঘাপ্রতি বছরে মাত্র সাড়ে তিন কী চার হাজার টাকা আয় হতো, সেখানে ব্রাহ্মীর মতো বিকল্প চাষ করে বিঘাপিছু আয় হচ্ছে বছরে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা।
রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় সাগর কৃষি উন্নয়ন ক্লাস্টার এবং নামখানা কল্পতরু ব্রাহ্মী কাল্টিভেশন ক্লাস্টার-এ মূলত এই চাষ হচ্ছে। দুটি জায়গাতে ৬০ বিঘা জমিতে ২০১৬ সালে চাষ শুরু হয়। এখন তা বেড়ে বেড়ে হয়েছে ১২০০ বিঘা। এই দুই জায়গা ছাড়াও নিমপীঠ আশ্রম, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু জায়গায় ব্রাহ্মীশাকের ফলন হচ্ছে।