বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
গঙ্গায় মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে প্রাথমিক গবেষণা শুরু করেছিলেন পুনর্বসু চৌধুরী। বুলবুলের ধাক্কার পর শিবপুরে ১৩০ ঘনমিটার জলে ১৬০০’রও বেশি অণু প্লাস্টিক পেয়েছেন তিনি। এটা নিয়েই এগচ্ছিলেন, এরই মধ্যে ভারতীয় দলের এই অভিযানের কথা জানতে পারেন তিনি। আবেদন করার পর ইন্টারভিউ ও প্রেজেন্টেশনের মধ্যে দিয়ে নির্বাচিত হন। তারপর শুরু হয় ট্রেনিং। প্রথমে উত্তরাখণ্ডের আউলিতে মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড স্কিইং ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষণ। তারপর ইন্দো-টিবেটান বর্ডার ফোর্সের প্রশিক্ষকরা তাঁদের নিয়ে যান বদ্রীনাথের কাছে শতপন্থ হিমবাহে। সেখানে চলে তুষাররাজ্যের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কঠোর প্রশিক্ষণ। দু’সপ্তাহের ট্রেনিং শেষে কলকাতায় ফেরেন পুনর্বসুবাবু।
তিনি বলেন, রবিবার গোয়া যাব। সেখান থেকে মুম্বই। মুম্বই থেকে আকাশপথে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন। সেখান থেকেই জাহাজ ছাড়বে আন্টার্কটিকার উদ্দেশ্যে। সেখানে ভারতীয় গবেষণাগার ‘ভারতী’ ও ‘মৈত্রী’র আশপাশেই চলবে তাঁদের গবেষণা। পুনর্বসুবাবু মাইক্রোপ্লাস্টিকের অসুর দলনে নেমে এক ব্রহ্মাস্ত্র হাতে পেয়েছেন আরেক বাঙালি গবেষক রমেন্দ্রলাল মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে। অপটিক্স নিয়ে গবেষণা করা এই বিজ্ঞানীর প্রায় ২৭টি যন্ত্রের পেটেন্ট রয়েছে। মাইক্রো মাইক্রোস্কোপেরও আবিষ্কর্তা তিনি। তিনিই কলকাতার গবেষককে একটি বিশেষ অণুবীক্ষণ যন্ত্র (সেটির এখনও পেটেন্ট নেওয়া হয়নি) দিয়েছেন। তা দিয়ে অন্যান্য অণুর মধ্যে আলাদা করে চিহ্নিত করা যাবে মাইক্রোপ্লাস্টিককে। এবং সেটা কোনও কৃত্রিম রঞ্জক ছাড়াই। পুনর্বসুবাবুর আশা, এর ফলে তিনি গবেষণায় অনেকটাই বাড়তি সুবিধা পেয়ে যাবেন।
সাধারণভাবে পাঁচ মিলিমিটারের ছোট প্লাস্টিককেই মাইক্রোপ্লাস্টিক বলা হয়। এই মাইক্রোপ্লাস্টিক সরাসরি মানুষের শরীরে ঢুকে বড়সড় ক্ষতি করছে, এমন স্পষ্ট প্রমাণ বিজ্ঞানীরা এখনও পাননি। কিন্তু বিভিন্ন প্ল্যাঙ্কটন (অণুজীব বা উদ্ভিদ)-এর মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সেগুলি মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে। পুনর্বসুবাবু জানান, মাইক্রোপ্লাস্টিক আমরা মাছের শরীরে পেয়েছি। মাছ থেকে সেটা আমাদের শরীরে ঢোকে। মূলত উৎসেচক নিঃসরণে বড়সড় হেরফের ঘটানোর ক্ষমতা রয়েছে এটির। মাইক্রোপ্লাস্টিক ভাঙতে ভাঙতে বিভিন্ন রাসায়নিক ছাড়ে। সেগুলিও ব্যাপক ক্ষতিকর। আন্টার্কটিকার অনেকটা অংশই এখন পর্যটনের আওতায় চলে এসেছে। এছাড়াও সেখানে বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য কারণে বেড়েছে মানুষের সমাগম। আশঙ্কা, পৃথিবীর দক্ষিণতম প্রান্তেও বেড়েছে প্লাস্টিক দূষণ।
প্রবীর ঘোষ দস্তিদারের গবেষণার বিষয়টিও কম আকর্ষণীয় নয়। দিল্লি থেকে তিনি ফোনে জানান, অ্যাডেলি এবং এম্পেরর পেঙ্গুইনদের মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করাই তাঁর এই সফরের প্রধান কাজ। পেঙ্গুইনরা পৃথিবীতে ছ’কোটি বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছে। কিন্তু বিশেষ পরিবর্তন হয়নি তাদের চেহারায়। তাদের মস্তিষ্কের গঠনও আদ্যিকালের। তা সত্ত্বেও তাদের বুদ্ধি, জোটবদ্ধ হয়ে থাকার ক্ষমতা এবং প্রতিকূলতাকে জয় করে টিকে থাকার লড়াই রীতিমতো গবেষণার বিষয়। তাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দেখা হবে, পেঙ্গুইনদের ‘হাসিখুশি’ জীবনের রহস্যটা কোথায়। এই গবেষণায় এইমস, আইআইটি মুম্বইয়ের মতো দেশের বেশ কিছু প্রথম সারির প্রতিষ্ঠানও আগ্রহের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। অর্থাৎ, পেঙ্গুইনদের রহস্যভেদ হলে, মানবজাতির অনেক গোপন তথ্য, সমস্যার সমাধান মিলতে পারে বলে আশা করা যায়।