বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
কয়েকদিন ধরেই বহরমপুর মহাকালী পাঠশালা সহ জেলার বেশ কিছু স্কুলে বিক্ষোভ চলছিল। টেস্টে অকৃতকার্যদের মাধ্যমিকে বসতে দিতে হবে, এই ছিল দাবি। জেলার এক শিক্ষক জানিয়েছেন, এটা যত না বছর নষ্টের আশঙ্কা, তার চেয়েও বেশি আতঙ্ক নাগরিকত্ব হারানোর। একটা শ্রেণীর মধ্যে ভয় চেপে বসেছে, এনআরসি, নাগরিকত্ব আইন এসবের জেরে তাদের বিপাকে পড়তে হবে। নাগরিকত্ব প্রমাণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড। তাই অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছিল। ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে অভিভাবকদের পাশে পেয়েছে, তাও অভূতপূর্ব। সন্তানদের শাসন করা নয়, স্কুল যাতে পরীক্ষায় বসার অনুমতি দেয়, এই ছিল তাঁদের দাবি। সম্ভবত প্রশাসনও সেই দিকটা ভেবেছে।
প্রসঙ্গত, ডিআই প্রথমে মহাকালী পাঠশালার ২৭ জন অকৃতকার্যকে পরীক্ষায় বসার ব্যবস্থা করার জন্য স্কুলকে নির্দেশ দেন। তারপরে জেলার সব স্কুলের জন্যই সেই নির্দেশ জারি হয়। এখনও পর্যন্ত কোনও জেলায় এমন নির্দেশের খবর পাওয়া যায়নি। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, সংখ্যালঘু প্রধান জেলা হওয়ার কারণেই মুর্শিদাবাদে এই ব্যাপারটায় জোর দেওয়া হয়েছে। ডিআইকে এ প্রসঙ্গে ফোন করা হলে তিনি বলেন, অর্ডার করেছি। সেটা আপনিও দেখেছেন। কিন্তু এর বাইরে একটি কথাও আমি বলতে পারব না। এর কোনও কারণ ব্যাখ্যা করতেও রাজি হননি তিনি।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ডের প্রতিলিপি চেয়ে তাদের কাছে এখনই শ’খানেক আবেদন জমা পড়েছে। এক শীর্ষ আধিকারিক জানিয়েছেন, স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরাও আবেদনকারীদের তালিকায় রয়েছেন। কেউ চিকিৎসক, কেউ আইনজীবী আবার কেউ উচ্চপদস্থ চাকুরে, রয়েছেন সবাই। তাঁরা মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড হারিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এনআরসি, সিএবি জুজুতে থরহরিকম্প হয়ে এসব নথি জোগাড় করা শুরু করেছেন তাঁরা। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে রেকর্ড ঘেঁটে পুরনো তথ্য জোগাড় করতে হচ্ছে পর্ষদকেও।
এর আগেও এক দফা অ্যাডমিট কার্ড চেয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন অসমের কিছু মানুষ। সেটাও মূলত এনআরসির কোপ থেকে বাঁচতেই। ত্রিপুরার একটা বড় সংখ্যক বাঙালি অসমে চলে গিয়েছেন পরবর্তীকালে। তাঁরা মাধ্যমিক পাশ করেছিলেন ত্রিপুরা থেকেই। কিন্তু ত্রিপুরায় তখন আলাদা কোনও পর্ষদ ছিল না। সেখানকার স্কুলগুলিও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অনুমোদিত ছিল। আর পরীক্ষাও নেওয়া হতো এখান থেকেই। তাই সেই মানুষদের বাধ্য হয়েও পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদেরই দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে আবার অন্য বিশ্লেষণও রয়েছে। কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এবং সাংগঠনিক অভিজ্ঞতায় জেলা পরিদর্শকের এমন চিঠি প্রথম দেখলাম। এরপর বাংলা মাধ্যমের স্কুলগুলি নিয়ে জনমানসে যে প্রভাব পড়বে, তা খুব একটা ভালো হবে না।