বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
এদিন আলোচনার শুরুতেই কংগ্রেসের বিধায়ক নেপাল মাহাত, সিপিএম বিধায়ক তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, ওই দলেরই শেখ আমজাদ হোসেন, বিজেপি বিধায়ক স্বাধীন সরকার ও কংগ্রেসের অসিত মিত্র ডেঙ্গু নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন। নেপালবাবু বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে রাজ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া— যেদিকে তাকাবেন, ব্যাপকভাবে এই রোগ ছড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিধানসভাতেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ১৭। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৫০০। সরকারি তথ্যও বলছে, জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত এ রাজ্যে ৫৬৪৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ছিল। অক্টোবর পর্যন্ত ছিল ২১ হাজার। আর এখন? ৪৪ হাজার পার করেছে। সাম্প্রতিক মৃত্যুর ঘটনাগুলি বাদ দিলে স্বাস্থ্য অধিকর্তা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ২৩। গত ক’মাসে লাফিয়ে বেড়েছে ডেঙ্গুতে মৃত ও আহতের সংখ্যা। অন্যদিকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবু অভিযোগ করেন, ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে। গবেষণা দরকার, কাজ দরকার। শুধুমাত্র স্বাস্থ্যসচিব পাল্টে কিছু হবে না।
এদিন গোড়া থেকে আলোচনাপর্বে তৃণমূল ও বিরোধী বিধায়কদের কথা কাটাকাটিতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিরোধীরা বারবার বলতে থাকেন, ১৯৪ মোশন এনে শুধু আলোচনা করলে হবে না। তাঁরা আরও বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে ন্যাশনাল ভেক্টর বর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের জাতীয় পরিসংখ্যানে গত দু’বছর ধরে তথ্যই দেয়নি রাজ্য। ডাক্তারদের ডেঙ্গু লিখতে বারণ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল সভাপতি ডাঃ নির্মল মাজি প্রমুখ প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ভুল তথ্য নিয়ে সরকারের মনোবল ভেঙ্গে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।
এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণের ঠিক আগে বাম বিধায়করা ওয়াকআউট করেন অধিবেশন কক্ষ থেকে। তা জেনে তুমুল ক্ষোভে ফেটে পড়েন মমতা। সিপিএম-কংগ্রেস-বিজেপিকে ‘জগাই-মাধাই-বিদাই’ বলে সম্বোধন করে মমতা বলেন, নিজেদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য আপনারা সমালোচনা করে যাচ্ছেন। মানুষ আপনাদের সঙ্গে নেই। একেবারে পর্যুদস্ত করে দিয়েছে। আর ৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে কী করেছেন? তিনটে প্রজন্ম নষ্ট করেছেন। আপনারা জানেন, আমি বলব। তাই বলার আগেই লেজ গুটিয়ে পালালেন। এ থেকেই স্পষ্ট, যা যা তথ্য দিয়েছেন, সব অসত্য, কুৎসা এবং অপপ্রচার। আমার সঙ্গে মুখোমুখি তর্কে নামুন। পালাচ্ছেন কেন? জেনে রাখুন, আমার বিরুদ্ধে যত বলবেন, আমার তত লাভ। আর যখন আমার উত্তর শুনবেনই না, আলোচনা চেয়েছিলেন কেন?
রাজ্যে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪৪ হাজার ৮৩২ এবং মৃতের সংখ্যা ২৭ জানিয়ে বিধানসভায় মমতা বলেন, প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক। একজনেরও মৃত্যু হোক, আমরা চাই না। তাও বলছি, গত বছর ৮৬ জন মারা গিয়েছিলেন। সেদিক থেকে এ বছর আমাদের চিকিৎসকরা, আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীরা মৃত্যু অনেকটাই কমাতে পেরেছেন। বর্তমানে তিন হাজার ডাক্তার, চার হাজার নার্স, ৫১ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী ডেঙ্গু মোকাবিলায় ৩৬৫ দিন কাজ করছেন। আশা, কন্যাশ্রীর মেয়েরা, আইসিডিএস কর্মীরাও কাজে নেমেছেন। রোগ মোকাবিলায় বাজেট বরাদ্দও গত বছরের ২৪৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৪৭৫ কোটি করা হয়েছে। বছরভর ডেঙ্গু সচেতনতার প্রচারে প্রচুর টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান প্রভৃতি প্রতিবেশী দেশ থেকেও ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে বলে এদিন ঘুরিয়ে ইঙ্গিত দেন মমতা। তাছাড়া পরিবেশ পরিস্থিতি সবটা তার হাতে নেই জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রেল, পোর্ট, মেট্রোও তো রাজ্যে কাজ করছে। অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রাক্তন পুরমন্ত্রীকে পাল্টা কটাক্ষ করে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, অপদার্থরাই দুনিয়াকেই অপদার্থ ভাবে। সিপিএম জমানায় তাঁর মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলেও এদিন জানান পুরমন্ত্রী।