বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
ধনেখালি থানার পারাম্বুয়া শাহ বাজার পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই মেলা বসে পয়লা মাঘ থেকে। চলে সাতদিন। এবার কোভিড আবহে আয়োজনে কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টায় কোনও খামতি নেই। এ বছরেও হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, বর্ধমান সহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মেলাতে ভিড় জমিয়েছেন দুই সম্প্রদায়ের মানুষ। চলছে পীর পুকুরে সিন্নি ভাসিয়ে মঙ্গল কামনা। মাজারে চলছে প্রার্থনা। মেলার আনুষাঙ্গিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষ।
পীর সাহেবের মাজার এর বর্তমান উত্তরাধিকারী সূত্রে জানা যাচ্ছে, ১৬৭০ সালে হিন্দু ও মুসলিমকে একই ডোরে বাঁধতে গোলাম আলী কেরমানি ধনেখালিতে এই মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। আলী সাহেবের আদি বাস ইরানের কেরমান শহরে। তাঁর পূর্ব পুরুষরা বীরভূমের পারুই থানা এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন। সৈয়দ শাহ আবদুল্লা কেরমানি ছিলেন তাঁদের একজন। ধনেখালির মত বর্ধমান, বাঁকুড়াতেও পীর সাহেবের মাজার রয়েছে। কেরমানিদের উত্তরসূরি সৈয়দ ইমরান বলছিলেন, ‘প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে এই মেলার সূচনা হয়েছিল। ইরানের কেরমান শহর থেকে আসার জন্য প্রতিষ্ঠাতাদের নামের শেষে কেরমানি লেখা হয়।’
পীর পুকুরে সিন্নি ভাসানোই এই মেলার মূল বিশেষত্ব। মনস্কামনা পূরণের জন্য হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে ভক্তরা ওই পুকুরে স্নান করেন। তার পর কলাপাতায় সিন্নি ভাসিয়ে অপেক্ষা করেন। ভক্তদের বিশ্বাস, সিন্নি জলে ভাসতে ভাসতে যদি নিজের হাতে ফিরে আসে তাহলে তাঁদের মনস্কামনা পূরণ হয়। তিন শতকেরও বেশি সময় ধরে এই বিশ্বাস অটুট রয়েছে। মনস্কামনা পূর্ণ হলে অনেকেই এখানে ফকির ও দরিদ্রদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেন।
কোভিডের দাপটে এবার মেলায় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইমরান জানিয়েছেন, মেলা কর্তৃপক্ষ ও পুলিস প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক সবরকম প্রচার করা হচ্ছে। মেডিক্যাল ক্যাম্প রাখা হয়েছে। মেলাকে ঘিরে রয়েছে সিসি ক্যামেরার নজরদারি। তবে প্রতিবছরই মেলা প্রাঙ্গনে শৌচালয় নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় ভক্তদের। তাই প্রশাসনের কাছে ইমরানদের আবেদন—লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় মেলায়। তাঁদের প্রয়োজনে সরকারি উদ্যোগে কিছু শৌচালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে পীর পুকুরের সংস্কারও জরুরি হয়ে পড়েছে। এছাড়া মাজারে আগত সকলের বসার জায়গা তৈরি হলে ভালো। এ ব্যাপারে ধনেখালি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রামেন্দু সিংহ রায় বলেছেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আগামিদিনে পঞ্চায়েত সমিতি ও পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’