উপার্জন বেশ ভালো হলেও ব্যয়বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সঞ্চয় তেমন একটা হবে না। শরীর খুব একটা ... বিশদ
পৃথিবী ছেড়ে সমাপ্তির চলে যাওয়ার পিছনে যে এই পাঁচ লক্ষ টাকা রয়েছে, তা তিনি নিজেই লিখে গিয়েছেন। সুইসাইড নোটে লিখেছেন, ‘৫ লাখ টাকা আমার বাবা কোথা থেকে দেবে? বাবার উপর চাপও দিতে পারব না। আমি নিরুপায়। তাই বাধ্য হয়ে একাজ’। যদিও সমাপ্তির বাবা সুকুমার রুইদাসের ব্যাখ্যা হল, পুজোর ছুটিতে বাড়ি আসার সময় ব্যাগ গোছানো দেখে নার্সিং হস্টেলের একজন দিদিমণি সমাপ্তিকে বলেছিলেন, যদি পড়াশোনা ছেড়ে একেবারে বাড়ি চলে যাও, বাবাকে বলবে পাঁচ লক্ষ টাকা জোগাড় করে রাখতে। তুমি যে আসনে ভর্তি হয়েছ, তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ওই টাকা দিতে হবে। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে এ কথা বাবাকে জানিয়েছিলেন তিনি। সোমবার সুকুমারবাবু বলেন, মেয়ে বারবার বলত, বাবা এত টাকা তুমি কোথায় পাবে? তাই ও যদি নার্সিং পড়া কোনও কারণে ছেড়ে দেয়, ওই পাঁচ লক্ষ টাকা কোথা থেকে জোগাড় করব, এ ভাবনা সবসময় ওর মাথায় ঘুরত।
কিন্তু, তা যদি সত্যি হয়, তাহলে তো আত্মহত্যায় প্ররোচনার মতো মারাত্মক অপরাধের অভিযোগ ওঠে ওই নার্সিং কলেজেরই জনৈকা দিদিমণির দিকে? কে ওই দিদিমণি? এ বিষয়ে রাজ্যের নার্সিং শাখার এক পদস্থ কর্ত্রী বলেন, পাঠ্যক্রম চলতে চলতে কেউ যদিও ছেড়ে চলে যান, পাঁচ লক্ষ কেন, পাঁচ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নিয়ম নেই।
এদিকে, সমাপ্তির রহস্যমৃত্যুর তদন্তে সোমবার খোদ রাজ্য নার্সিং শাখার ডাইরেক্টরেটের শীর্ষকত্রী তথা যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা (নার্সিং) মাধবী দাস ন্যাশনালে যান। দীর্ঘক্ষণ ছিলেন সেখানে। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, দ্রুত তাঁকে ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
গোটা গোটা সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা সমাপ্তির সুইসাইড নোটের শেষদিকের কথাগুলিও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। ন্যাশনালের জিএনএম পাঠ্যক্রমের এই প্রথম বর্ষের ছাত্রী যেখানে লিখেছেন, ’আমি বাবাকে খুব ভালোবাসি। নিজের চোখে বাবার এত কষ্ট দেখতে পারব না। তাই এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলতে পারব না। আর সবাই বলছে হয়ে যাবে, হয়ে যাবে। কিন্তু আমি তো এতদিন চেষ্টা করলাম। কিছুই হল না। আর সারা বছরের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।’ কী হয়ে যাওয়ার কথা বলছেন সমাপ্তি? কী চেষ্টা করার কথা বলেছেন তিনি? মানিয়ে নেওয়ার? সে প্রশ্নই বা আসছে কোথা থেকে, যেখানে পাঠ্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র দেড় মাস হল। আর ক্লাস হয়েছে দিন পনেরোও নয়। মানিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন তাহলে আসছে কেন? এইসব প্রশ্নের সদুত্তর এখনও পাওয়া যায়নি বলেই পুলিস সূত্রের খবর।
সমাপ্তির বাবা সুকুমারবাবু এদিন আরও অভিযোগ করেন, নার্সিং পাঠ্যক্রমে ভর্তির পর মাত্র কয়েক মাসে বই ও পোশাক বাবদ প্রায় ৩০ হাজার টাকা আমার খরচ হয়েছে। কীভাবে কষ্ট করে টাকা জোগাড় করছি, সে কথা তবুও মেয়েকে কখনওই বোঝাতে চাইনি। চেয়েছিলাম ও আর পাঁচটা মেয়ের মতোই স্বাভাবিকভাবে পড়াশোনা শেষ করুক। পাল্টা যুক্তিতে নার্সিং কর্ত্রীরা বলছেন, তিন বছরের সরকারি জিএনএম পাঠ্যক্রমে মাসিক সেশন ফি মাত্র ১২ টাকা। খরচ নামমাত্র। প্রচুর সুযোগ-সুবিধা আছে। তাহলে এত টাকা খরচের কথা আসছে কোথা থেকে?
এদিকে, মঙ্গলবারও হাঁড়ি চড়েনি মৃত সমাপ্তির বাড়িতে। শান্ত স্বভাবের মেধাবী ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু এখনও মেনে নিতে পারেনি গোটা এলাকা।