সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি, ১৯ নভেম্বর: শুধু অসম নয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মেঘালয়েও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে শুরু হয়েছে সংসদের শীতকালীন অধিবেশন। আর গতকাল থেকেই এই রাজ্যগুলিতে বিভিন্ন সংগঠন রাস্তায় নেমে অবস্থান, ধর্না, বিক্ষোভ শুরু করেছে। আর এই উদ্ভূত পরিস্থিতিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রবল উদ্বেগে মোদি সরকার। মনে করা হয়েছিল সংসদের এই অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই যত দ্রুত সম্ভব ওই বিল পাশ করানোর জন্য মরিয়া হয়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় বিল পেশ করবে সরকার। সেই প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছিল। কিন্তু আচমকা উত্তর-পূর্ব ভারত জুড়ে এভাবে যে আন্দোলন শুরু হবে সেটা আন্দাজ করা যায়নি। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন চালু হলে গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত স্তব্ধ করে দেওয়া হবে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। সামগ্রিক সাতটি রাজ্যের তাবৎ ছাত্র ইউনিয়নগুলির সম্মিলিত সংগঠন নর্থ ইস্ট স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন (নেসো) সাত রাজ্যজুড়েই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কৃষকদের সংগঠন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, অসমের যুব সংগঠন জাতীয়তাবাদী যুব ছাত্র পরিষদ, বামপন্থী প্রগতিশীল মোর্চা, ও এই আন্দোলনের অংশীদার। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, যে বিজেপি ক্ষমাতয় আসার আগে এতকাল ধরে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের সব রাজ্যের জনজাতিদের নিজস্ব সংস্কৃতি, ভাষা আর জীবিকার সুযোগ সুধিবা রক্ষার দাবিকে সমর্থন করে এসেছে, আজ সেই বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ভোটব্যাঙ্ক রাজনীতির কারণে বৈধ নাগরিকত্ব ইস্যুকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণে পর্যবসিত করে আসল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে। নাগরিকত্ব আইন সংশোধিত হলে উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রকৃত বাসিন্দাদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়বে বলে এই আন্দোলনকারীদের অভিযোগ। ইতিমধ্যেই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছে ছাত্রদের সংগঠন নেসো আর এই আন্দোলনের কারণেই সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনা নিয়েও আপাতত ভাবনাচিন্তা করতে হচ্ছে সরকারকে। সরকার চাইছে আন্দোলন, প্রতিবাদ, বিক্ষোভের মধ্যে জোর করে কোনও সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরও একবার রাজনৈতিক ও সরকারিভাবে এই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলা হবে। বোঝানোর চেষ্টা করা হবে। ওই রাজ্যগুলির বিজেপি ইউনিটের পক্ষ থেকেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে অনুরোধ করা হচ্ছে সব দিক বিবেচনা করে সাধারণ মানুষের মনোভাব বুঝেই যেন পদক্ষেপ করা হয়। নাগরিকত্ব সংশোধন বিলে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদের ছাড় দেওয়া হবে। তাদের অনুপ্রবেশকারী তকমা দেওয়া হবে না। এখা঩নেই আপত্তি এই আন্দোলনকারীদের। কারণ অসম সহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের আন্দোলনকারীদের দাবি কোনও ধর্মীয় চিহ্ন নয়, অনুপ্রবেশকারী হলেই তাদের তাড়াতে হবে। হিন্দু মুসলিম কোনও বিভাজন চলবে না। উল্লেখ্য সত্তর দশকের অসমে বাঙালি খেদাও আন্দোলনের মূল সুরও ছিল এরকমই। অর্থাৎ হিন্দু বা মুসলিম নয়, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে যত বেআইনি অনুপ্রবেশ হয়েছে, সকলকেই অবৈধ নাগরিক ঘোষণা করে চিহ্নিত করা হোক। এনআরসির চুক্তিও সেই দাবির ভিত্তিতেই করা হয়েছে। এনআরসি সমর্থন করলেও তাই, এই সব রাজ্যের আন্দোলনকারীরা নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধী।