কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
শিবাজী চক্রবর্তী: থমথমে মুখ। শেষ বাঁশি বাজতেই রাগে গজগজ করতে করতে ড্রেসিং-রুমে হাঁটা দিলেন কোচ ডোরিভাল জুনিয়র। তাঁর ক্ষোভ প্রাসঙ্গিক। তাঁর জমানায় সবচেয়ে খারাপ ম্যাচটা বোধ হয় কলম্বিয়ার বিরুদ্ধেই খেলল সেলেকাওরা। লিড নিয়েও কেঁদে-ককিয়ে ১-১ গোলে ড্রয়ের পর সমালোচনার আগুন জ্বলছে। রবিবার কোয়ার্টার-ফাইনালে গ্রুপ রানার্স ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে। ছন্নছাড়া পাকুয়েতাদের দেখে সুয়ারেজ, নুনেজদের চোখ চকচকে। পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের দশা দেখে আতঙ্কিত অনুরাগীরা।
কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে দল নামান ডোরিভাল। ম্যাচের ১২ মিনিটে রাফিনহার দুরন্ত গোলে এগিয়ে যায় ব্রাজিল। বিপক্ষ বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার বাঁ পায়ের দুরন্ত ফ্রি-কিক আছড়ে পড়ে জালে (১-০)। তবে হলুদ-সবুজ সমর্থকদের উচ্ছ্বাস দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। কলম্বিয়ার খুচরো ফাউল আর গা-জোয়ারি ফুটবলের ফাঁদে পা দিয়ে খেলা থেকে হারিয়ে গেলেন ভিনিসিয়াসরা। মিসপাস, মনঃসংযোগের অভাব, মেজাজ হারিয়ে কার্ড দেখা—কোনওকিছুই বাদ রইল না । ম্যাচ গড়ানোর সঙ্গেই প্রেসিং ফুটবলে ব্রাজিলের নাভিশ্বাস তুলে দেন হামেস রডরিগেজ, ডিয়াজ, রিওসরা। বিরতির আগে কলম্বিয়াকে সমতায় ফেরান ড্যানিয়েল মুনোজ (১-১)। মরিয়া ডোরিভাল দ্বিতীয়ার্ধে স্যাভিনহো, এডারসনদের নামালেও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বরং ব্রুনো গিমারেজ, মিলিতাওরা চাপের মুখে খেই হারালেন। ভাগ্য সহায় থাকায় কোনওরকমে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে সাম্বার দেশ।
ব্রাজিল মানেই ‘জোগো বোনিতো’। অর্থাৎ দৃষ্টিনন্দন ফুটবল। শরীর মোচড়ানো ড্রিবলিং, টাচ, পাসের ফুলঝুরিতে সবুজ মাঠে আলপনা। পাওয়ার ফুটবলে হাঁসফাঁস করা দর্শকের কাছে এ যেন এক টুকরো মরূদ্যান। কিন্তু সেলেকাওদের সেই ঝলকানি এখন শুধুই অতীত। ২০০২ সালে শেষবার বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ব্রাজিল। কোপা জয়? তাও নয় নয় করে পাঁচ বছর আগে। বোহেমিয়ান ফুটবলের টানে দর্শকদের মাঠমুখী করার সাম্বা ম্যাজিশিয়ানরা ভ্যানিশ। জিকো, সক্রেটিসদের ঘরানা থেকে সরে এখনকার ব্রাজিল হিসেবি ফুটবলে বিশ্বাসী। তাতে ফর্মেশনের কচকচানি থাকলেও দৃষ্টিসুখ নেই। রডরিগো, স্যাভিনহো, গিমারেজ, এডারসনরা অতি সাধারণ। স্রেফ স্ট্র্যাটেজি মেনে অংক মেলানোর চেষ্টা। প্রশ্নপত্রে কমন না এলেই সমস্যা। পেলে, রোনাল্ডোর দেশে বক্স স্ট্রাইকারের অভাব স্পষ্ট। জোর চর্চা, ব্রাজিলের ফুটবল সভ্যতা কি বিপন্ন? গ্রেমিও-সাও পাওলোর ফুটবল নতুন প্রতিভা অমিল। ১৭ বছরের এনড্রিককে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মেগাস্টার বানানোর জোর প্রয়াস চলছে। কিন্তু ‘ম্যাজিক বয়’ এখনও আন্তর্জাতিক মঞ্চে সেভাবে পরীক্ষিত নন। তৈরি হতে সময় লাগবে। ব্রাজিলিয়ান লিগে সাফল্য পাওয়া আর জাতীয় দলের জার্সিতে প্রত্যাশা পূরণের ফারাক বিস্তর। রোম্যান্টিক সাম্বা ফুটবল এখন পথ হারানো ভ্রান্ত পথিক। মাঝেমধ্যে তুবড়ির মত জ্বললেও তা বড়ই ক্ষণস্থায়ী। শেষ আটের আগে সেলেকাওদের অহংবোধ কি জাগিয়ে তুলতে পারবেন ডোরিভাল?