কাজকর্ম, বিদ্যাশিক্ষায় দিনটি শুভ। বৃত্তিগত প্রশিক্ষণে সাফল্যের সুবাদে নতুন কর্মপ্রাপ্তির সম্ভাবনা। দেহে আঘাত লাগতে পারে। ... বিশদ
নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মনমোহন সিং বলেছিলেন, ‘সরকার যে ক্যাশলেস ব্যবস্থা আনার কথা বলেছে, সেটা ভারতের মতো গরিব দেশে বাস্তবসম্মত নয়। যে দেশে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ দরিদ্র, সেখানে এই ব্যবস্থা এখনই কার্যকর করা যায় না।’ মোদি পাল্টা আক্রমণ ছিল, ‘মনমোহন সিং এত বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ। কিন্তু তিনি কার আমলের কথা বলছেন? তাঁর? নাকি আমার?’ অর্থাৎ মোদি বোঝাতে চেয়েছিলেন, তাঁর শাসনকালে এত গরিব নেই। অতএব মনমোহন সিংয়ের কথারও মূল্য নেই। সত্যিই কি তাই? কয়েক বছরের মধ্যেই উপলব্ধি করেছিলেন মোদি। কারণ এখন আর মোদির মুখে নোট বাতিল নিয়ে সাফল্যগাথা শোনা যায় না। বরং মনমোহনী পূর্বাভাসই সত্যি হয়েছে। নোট বাতিল ফ্লপ।
কখনও ২০০৯ সাল। কখনও ২০১৩। মোদির কণ্ঠে উঠে এসেছে ব্যঙ্গ। আক্রমণ। বলেছেন, ‘মূল্যবৃদ্ধি কমবে বলে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রধানমন্ত্রী একটা করে বিবৃতি দেন। আসলে কিছুই হয় না। মূল্যবৃদ্ধি কমানোর ক্ষমতাই নেই তাঁর।’ আর মোদি জমানায়? বছরের পর বছর এই মূল্যবৃদ্ধির আঁচেই পুড়ছে দেশবাসী। টাকার দামের অবনতি নিয়ে মোদি ২০১৪ সাল পর্যন্ত বারংবার তোপ দেগেছেন, ‘কোনও প্রধানমন্ত্রী ইচ্ছা করলে ডলারের বিনিময়ে টাকার মূল্য কমাতে পারেন না, এটা হতে পারে?’ আর আজ মোদির আমলে টাকার বিনিময়মূল্য প্রতিদিন রেকর্ড হারে কমছে।
১০ বছর পর মোদির উপলব্ধি হয়েছে প্রকৃতপক্ষে মনমোহন সিং কেমন ছিলেন। তাই শুক্রবার তাঁর ভাষণে সাধুবাদের কোনও শব্দ ও বিশেষণই আর বাদ রইল না। বললেন, ‘মনমোহন সিংয়ের চলে যাওয়া গোটা রাষ্ট্রের কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি। ভদ্র, বিদ্বান, অর্থনীতিবিদ এবং সংস্কারে সমর্পিত প্রশাসক।’ মোদির কথায়, ‘নরসিমা রাও সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে ভারতকে নতুন এক উন্নত অর্থব্যবস্থার দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মনমোহন সিং। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের বিকাশ ও প্রগতিতে তাঁর অবদান চিরকালীন। জনতা এবং দেশের বিকাশের প্রতি তাঁর আত্মত্যাগ প্রেরণার যোগ্য।’ মোদি বললেন, ‘মনমোহন সিংয়ের মতো সৌম্য, বুদ্ধিজীবী এবং অনন্য শিক্ষিত মানুষের সংসদে উপস্থিতি তাঁকে অনন্য এক স্থান দিয়েছে। একজন সংসদ সদস্য হিসেবেও তিনি ছিলেন অনুপ্রেরণাযোগ্য।’ মোদির অনুভব, ‘দুনিয়ার তাবৎ শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ও সরকারের শীর্ষ পদে থাকা সত্ত্বেও কখনও তৃণমূল স্তরকে যিনি ভোলেননি, তাঁর নাম মনমোহন সিং।’ মোদির স্মরণ মনমোহন সিং শুনে যেতে পারলেন না। তবে তিনি বিশ্বাস রেখেছিলেন ইতিহাসের উপর। ঠিকই করেছিলেন। ইতিহাস সব হিসেব চুকিয়েই দেয়।