উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
এ কোনও গল্প নয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শেষ প্রান্ত বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষা সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ জি প্লটের ইন্দ্রপুর গ্রামের ঘটনা। সোমবার দুপুরে সেখানে পৌঁছে এমন একটি ঘটনা দেখতে হবে আশা করা যায়নি। ওই মা এবার জমিতে দৌড়ে গিয়ে কাদায় হাত ও পা ডুবিয়ে কয়েক গাছা শাকপাতা তুলে আনলেন। তারপর দু’টি ইট পেতে একটি হাঁড়িতে তা দিয়ে আগুন জ্বেলে ফোটাতে লাগলেন। বললেন, রবিবার ত্রাণ শিবিরে গিয়েছিলাম, কোনও খাবার পাইনি। কোনও রকমে দু’টো বিস্কুট জোগাড় করে বাচ্চাকে দিয়েছিলাম। রাতে না খেয়েই কাটিয়েছি। আমাদের গ্রামের একশো ঘর ত্রাণ শিবিরে ছিল। কেউ খাবার পায়নি। বিদ্যুৎ নেই কয়েকদিন ধরে। সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার। তাই সকাল হতেই ঘরে চলে এসেছিলাম। যদি বাচ্চাটাকে কোথা থেকে খাবার জোগাড় করে দিতে পারি। পারলাম না।
তিনি আরও বলেন, পুকুরে মাছ ছিল। বাঁধ ভেঙে লোনা জল ঢুকে সব মাছ এখন ভাসছে। ইন্দ্রপুরে গোটা গ্রামের পুকুরের একই অবস্থা। এর মধ্যে কোথা থেকে এসে হাজির বাচ্চার বাবা সঞ্জিত তুঙ্গ। করুণ সুরে বললেন, কোথাও কিছুই পেলাম না। পেশায় মৎস্যজীবী সঞ্জীব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, সব সময় জলে থাকতে থাকতে লড়াই করা শিখেছি। তিনবার গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছি। এর আগে আইলার সময় ইন্দ্রপুরসহ জি প্লটের অর্ধেক তলিয়ে গিয়েছিল। জানেন, একমাস ট্রলারের মধ্যে এখানকার ৫০ জন পরিবারকে নিয়ে জলের মধ্যে নোঙর করে কাটিয়েছি। তারপর বহু কষ্টে ঘর তৈরি করেছি। এবার আর কিছুই থাকল না। ফের নিঃস্ব গেলাম।
এদিন জি প্লটের ইন্দ্রপুর ও সুরেন্দ্রগঞ্জ ঘুরে দেখার সময় চারপাশে বুলবুলের ভয়ঙ্কর তাণ্ডবের চেহারা নজরে এল। মনে হল, বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপ এখন ধ্বংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে। এখনও রাস্তার উপর বহু গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটিও কোথাও কোনও ঘরের উপর পড়েছে। তা টপকে যেতে হচ্ছে। বিঘের পর বিঘে পানের বরোজ ভেঙে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। জগদ্দল নদীর ধার ঘেঁষা এই গ্রামের নদীর বাঁধের অবস্থাও বেশ কয়েকটি জায়গাতে ধসে গিয়ে লোনা জল ঢুকছে। তাতে প্রচুর পুকুর ডুবে গিয়ে মাছ মারা গিয়েছে। বহু বাড়িতে চাপা পড়ে মারা গিয়েছে গবাদি পশু ও মুরগি। গোটা এলাকা তার দুর্গন্ধে ম ম করছে। ফেরার সময় সুরেন্দ্রগঞ্জের এক মৎস্যজীবী অসহায় সুরে জানতে চাইলেন, আমাদের কী হবে বলতে পারেন? বিচ্ছিন্ন এই অন্ধকার দ্বীপে এভাবেই কি না খেয়ে আকাশের তলায় থাকতে হবে?