দক্ষিণ কলকাতার টালিগঞ্জ অঞ্চলে দু’টি রাসবাড়ি রয়েছে। একটি বড়, অন্যটি  ছোট। ছোট রাসবাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শ্রী প্যারীলাল মণ্ডলের নাম। ইনি বাওয়ালির বিখ্যাত মণ্ডলবংশের পুত্র। প্যারীলালবাবুর কথা জানা যায় ঐতিহাসিক রাধারমণ মিত্রের বইতে। আরও বেশ কিছু লেখায় তাঁর উল্লেখ রয়েছে। উনিশ শতকের মাঝামাঝির কথা। প্যারীলালবাবুর তখন বিশাল প্রতিপত্তি। ইংরেজদের সঙ্গে বেশ মধুর সম্পর্ক। কিন্তু সব সম্পর্কেই চড়াই উৎরাই থাকে। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। একটি জমি নিয়ে একবার তাঁর সঙ্গে গোলমাল শুরু হয় ইংরেজদের। দু’পক্ষই আদালতের দ্বারস্থ হয়। সেই মামলা দেখার জন্য জমে যেত ভিড়। অবশেষে একদিন রায় ঘোষণা করল আদালত—ক্ষতিপূরণ দিতে হবে প্যারীলালকে। একমাত্র তাহলেই তিনি জমি ফেরত পাবেন, নচেৎ নয়। কিন্তু টাকার অঙ্কটা বলা হল না। শুধু ঘোষণা করা হল, নির্দিষ্ট দিনেই তা জানানো হবে। আর সেই ক্ষতিপূরণ মেটাতে হবে তৎক্ষণাৎ। গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন সাহেবসুবোরা। তাঁরা ভালোভাবেই জানতেন, টাকা দেওয়াটা প্যারীলালের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। অবশেষে এল জরিমানা মেটানোর দিন। টাকার কুমির প্যারীলাল। টাকাও এল গোরুর গাড়ি বোঝাই করে। ঘোড়ার গাড়ি থেকে নেমে খোশমেজাজে আদালতের ভিতরে ঢুকে গেলেন প্যারীলাল। ইংরেজদের মুখেও তখন এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি। বিচারক এসে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক ঘোষণা করলেন। বললেন, আদালত কক্ষে দাঁড়িয়েই সেই অর্থ মেটাতে হবে। ক্ষতিপূরণের অঙ্ক শুনেই পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছিল প্যারীলালের। বুঝে গিয়েছিলেন জমি যাবেই। হার হবে মামলায়। তাঁর মতো ধনী ব্যক্তি সেই মুহূর্তে ওই অর্থ দিতে পারেননি। কেন জানেন? অঙ্কটি ছিল মাত্র এক পয়সা। সেই এক পয়সা প্যারীলালের পকেটে ছিল না।

পলাশীর যুদ্ধের পর ইংরেজ শাসন তখন জাঁকিয়ে বসেছে বাংলা তথা ভূভারতে। ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা। জনসমাজে শুরু হয়েছে ভাঙাগড়া। এতদিন ধর্মীয় ও রক্ষণশীলতার গোঁড়ামি জাঁকিয়ে বসেছিল জনমানসে।