বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
পয়লা বৈশাখের সকালে ময়দানের দুই বড় ক্লাবে বারপুজো এবং পেটপুজোর সেই অতীত গরিমা আজ অনেকটাই ফিকে। মোহন বাগান মাঠে তো রীতিমতো ‘ভিয়েন’ বসে যেত। হালুইকর বামুনরা গরম রাধাবল্লভী, অতিশয় উপাদেয় আলুম দম, গরম পানতুয়া, দরবেশ বানিয়ে ফুলবলপ্রেমীদের রসাস্বাদন করাতেন। মোহন বাগান মাঠে পুরোহিত আসতেন কালীঘাটের মন্দির থেকে।
ইস্ট বেঙ্গল মাঠেও জ্যোতিষ চন্দ্র (জেসি) গুহ মহাধূমধাম করে পয়লা বৈশাখের আয়োজন করতেন। সদস্য-সমর্থকদের মুখমিষ্টি করাতেন পেল্লাই সাইজের রসগোল্লা দিয়ে। এই পরম্পরা ডাঃ নৃপেন দাস, পল্টু দাসদের আমলেও বহাল ছিল। এখনও তা চলছে বটে, তবে ক্রমহ্রাসমান সমর্থকদের উপস্থিতি ও স্বতঃস্ফূর্ততা দেখে বোঝা যায়, সেই রামও নেই, অযোধ্যাও নেই।
ছয়, সাত ও আটের দশকে মোহন বাগান মাঠে বাংলা নববর্ষের সকালে মধ্যমণি হয়ে বিরাজ করতেন প্রয়াত কর্ণধার ধীরেন দে। গরদের ধুতি ও অঙ্গবস্ত্র পরে বারপুজোর সময় সংকল্প করতেন। তারপর সেই মরশুমে চুক্তিবদ্ধ ফুটবলারদের উপস্থিতিতে মহাধুমধামে বারপুজো সম্পন্ন হত। পুজো শেষে ক্লাবের একমুঠো অর্থ নিজের হাতে ধীরেন দে তুলে দিতেন মালিদের প্রত্যেককে। আর মালিরা সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করত ধীরেনবাবুকে। পুজোর পর ক্রসবার প্রোথিত হত মাঠের দুই প্রান্তে। সেদিন থেকেই শুরু হত পরবর্তী মরশুমের প্রস্তুতির জন্য ক্লাবের অনুশীলন। তবে ছয়ের দশকে ৯ বা ১০ মে কলকাতার বড় ক্লাবগুলি সাধারণত লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামত। কিন্তু জাতীয় লিগ ও পরবর্তী সময়ে আই লিগের জন্য দলবদলের মরশুম পিছিয়ে যাওয়ায় এখন প্রিমিয়ার লিগ শুরু হয় বর্ষাকালে। এছাড়া আই লিগে খেলতে অনেক সময়ই দেখা যেত বড় ক্লাবগুলি ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। তাই জুনিয়ার বা নার্সারি ফুটবলারদের উপস্থিতিতেই নমো নমো করে বারপুজো সম্পন্ন হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে।
ইস্ট বেঙ্গল মাঠে বারপুজোর একটা স্মৃতি আজও অম্লান। চার বছর মোহন বাগানে কোচিং করিয়ে সেইবার প্রবাদপ্রতিম কোচ পি কে ব্যানার্জি গিয়েছেন ইস্ট বেঙ্গলে। আগের মরশুমে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে বিশাল বাজেটে গড়া ইস্ট বেঙ্গলের ট্রফিহীন দল ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে। সুরজিৎ সেনগুপ্ত’র নেতৃত্বে চোদ্দোজন ফুটবলার লাল-হলুদ জার্সি খুলে মহমেডান স্পোর্টিংয়ে সই করেছেন। বুড়ো বয়সে মহম্মদ হাবিব চার বছর মোহন বাগানে কাটিয়ে ফিরে গিয়েছেন ইস্ট বেঙ্গলে। কিন্তু সেইবার পিকে’র চওড়া কপালে ‘চাঁদ’ হয়ে দেখা দিলেন ১৯৭৮ সালে ইরানের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে থাকা মজিদ বাসকর। প্রথম দর্শনেই যাঁর খেলা দেখে এই প্রতিবেদক বলেছিল,‘গ্যালপিং মেজর’। দুরন্ত স্ট্রাইড, দুর্ধর্ষ শট ছিল সুদর্শন মজিদের খেলার অন্যতম বৈশিষ্ট। সেইবার মজিদের সঙ্গেই আর এক ইরানি ফুটবলার জামশিদ নাসিরি ইস্ট বেঙ্গলে সই করেছিলেন। ১৯৮০ সালে ইডেন গার্ডেন্সে ফেডারেশন কাপ ফুটবলের জমজমাট লড়াই আজও অনেকে ভুলতে পারেননি। সেইবার কানায় কানায় পূর্ণ ইডেনে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল ড্র হওয়ার পর মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলকে যুগ্ম চ্যাম্পিয়নরূপে ঘোষণা করা হয়। সেইবার পয়লা বৈশাখের দিন বারপুজোয় স্রেফ মজিদ বাসকারকে দেখার জন্য ইস্ট বেঙ্গল মাঠ সদস্য সমর্থকে ভরে গিয়েছিল। ওই পরিমাণ ভিড় কোনও বড় ক্লাবের বারপুজোয় কদাচিৎ আমি প্রত্যক্ষ করেছি। সেইবার কমজোরি দল নিয়েও পিকে ব্যানার্জির ভোকাল টনিকে লড়ে গিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। আর মজিদের ফুটবলশৈলী দেখে মোহিত হয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার দর্শকরা।
এখন পয়লা বৈশাখ এলেই বারপুজোর সেই অতীত গরিমা মনে পড়ে যায়। এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে কলকাতার দুই প্রধান। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন এবার সুপার কাপে না খেলার জন্য কড়া শাস্তি দিতে পারে দুই প্রধানকে। দুই প্রধানের সামনে কার্যত অবরুদ্ধ আইএসএলের দরজা। ইন্ডিয়ান সুপার লিগের দুই প্রধান সত্ত্বাধিকারী এফএসডিএল এবং আইএমজিআর নতুন বিড আহ্বান করেনি। ফেডারেশন আই লিগকে দ্বিতীয় সারির টুর্নামেন্ট করার প্ল্যান ছকে ফেলেছে। সেক্ষেত্রে বাঙালির গর্ব মোহন বাগান ও ইস্ট বেঙ্গলের অতীত গরিমার দিন কি শেষ হতে চলেছে?