আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
ঠিক এভাবেই উদাসী বিকেলের হাত ধরে মায়াময় এক সন্ধ্যার সাক্ষী হওয়ার জন্য আসতে হবে সিলারিগাঁও। দার্জিলিংয়ের অল্প চেনা ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। দৈনন্দিন জীবনের লাট্টুপাক থেকে দিন কয়েকের ছুটি ম্যানেজ করে সোজা চলে আসুন স্বপ্নের এই মনকাড়া ঠিকানায়। এক দিকে তুষারধবল পাহাড়শ্রেণী, আর অন্যদিকে ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া রংবেরঙের কটেজ। তারও পেছনে পাইনের দেওয়াল।
সিলারিগাঁও পৌঁছনোর শেষ ৭-৮ কিমি পথটা কাঁচা এবং পুরোটা ছোট বড় পাথরে ভরা। কাজেই গাড়ি যেতে সময় লাগে। প্রায় ৪৫ মিনিট। এ পথটুকু গাড়ির সঙ্গে সাওয়ারিদেরও বেশ ঝাঁকুনি পোহাতে হয়। কষ্ট না করলে যে কেষ্ট মেলে না – প্রবাদবাক্যের যথার্থতা মালুম হবে পথের শেষে। ঠিক যেখানে এসে চারচাকার ইতি। দৃষ্টির সামনেই কাঞ্চনজঙ্ঘা! সপারিষদ! আপনাকে বাক্যহারা করে দেবে। মোহচ্ছন্ন করে তুলবে। সারাদিন পাহাড়পাড়ার রং বদলের সাক্ষী থাকে সিলারিগাঁও, সেই সঙ্গে ঘুরতে আসা পর্যটক।
কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সামনে রেখে কয়েক ঘর লোকের বাস। প্রত্যেক বাড়ির আঙিনায় হোম স্টে। গ্রাম পর্যটনের নতুন সংজ্ঞা— ইকো ট্যুরিজম। প্রতিটি বাড়ির চৌহদ্দি, বারান্দায়, ফুলের রংবাহারি। রং বদলের হোলি খেলায় যখন মেতে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা, চোমলহরি, কাবারু, পাণ্ডিমসহ অন্যান্য পিক , শুধুমাত্র সেই দৃশ্য দেখার জন্য বারবার আসতে হবে সিলারিগাঁও। যে গ্রাম ‘নতুন দার্জিলিং’ নামে পর্যটন মানচিত্রে পরিচিতি পাচ্ছে।
সিলারির একটা ভিউ পয়েন্ট আছে। প্রাতঃরাশ সেরে বেরিয়ে পড়ুন। পথ দেখানোর লোক পেয়ে যাবেন। পথ উঠে গেছে এঁকে বেঁকে। গ্রামের শেষে পাহাড়কে বেড় দিয়ে রাস্তা ক্রমশ উঠে যাবে। একদিকে খাদ, আর অন্য পাশে পাথুরে মাটি আঁকড়ে গাছগাছালির সংসার। উপছে পড়া রঙবেরঙের অজস্র পাহাড়ি ফুল। পথের শেষে ভিউ পয়েন্ট। উন্মুক্ত পাহাড়শীর্ষ। অনেক নীচে সবুজের বুক চিরে রেশি নদীকে মনে হবে রুপোলি পাত। পাহাড়ের বুকে খেলে বেড়ানো সকালের রোদ, মন ভালো করে দেবে। দেখতে পাবেন বরফেরা কেমন আপন খেয়ালে সাজিয়ে তুলেছে গিরিশৃঙ্গকে। উত্তরে হাওয়ায় ভেসে আসা বুনো ফুলের সুবাসে মোহাচ্ছন্ন হয়ে উঠবে প্রাণমন। তুষারধবল গিরিশৃঙ্গের সান্নিধ্য, নিস্তব্ধ প্রকৃতি, অপার শান্তি পেতে হলে আপনার গ্রীষ্মের ঠিকানা হোক সিলারিগাঁও।
প্রয়োজনীয় তথ্য: উত্তরবঙ্গগামী যে কোনও ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। গোটা গাড়ি বুক করে যেতে হবে সিলারি। সময় নেবে কমবেশি সাড়ে তিন ঘণ্টা। শেয়ারে কালিম্পং। সেখান থেকে শেয়ারে আলগারা হয়ে পেডং। পেডং থেকে গাড়ি ভাড়া করে শেষ সাত কিমি যেতে হবে। এইটুকু পথ কাঁচা। এ ছাড়া বিমানে বাগডোগরা। তারপর গাড়ি বুক করে সোজা সিলারিগাঁও।
সিলারিতে কোনও হোটেল নেই। সব হোম স্টে। আধুনিক অভ্যস্ত জীবনের সব সরঞ্জাম দিয়ে সাজানো প্রতিটি হোম স্টে। থাকা, সেই সঙ্গে চারবেলার খাওয়ার যাবতীয় দায়িত্ব হোম স্টে’র মালিকের। এঁরা বেশ অতিথি বৎসল। আপ্যায়নের ত্রুটি রাখে না। যা কিছু আবদার, এদের কাছেই করতে হবে। দোকান-বাজার নেই এই ছোট্ট গ্রামে। মাথাপিছু ১০০০-১৫০০ মধ্যে সারাদিনের খাওয়া-থাকা।
সংগ্রহ করুন – নির্ভেজাল ভালোলাগা, দূষণমুক্ত পরিবেশ থেকে পাওয়া শুদ্ধ এনার্জি আর অনেক অনেক না ভোলা ছবি, মুহূর্ত, যা মন ক্যামেরায় বন্দি থাকবে চিরটা কাল।
সফরসূচি—১ম দিন সকালে নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছে গাড়ি বুক করে সোজা সিলারিগাঁও। দুপুরের আগেই পৌঁছে যাবেন।
২য় দিন সারাদিন সিলারি। ৩য় দিন কালিম্পং রিশপ বা কোলাখাম ঘুরে আসুন। ৪র্থ দিন নিউজলপাইগুড়ি পৌঁছে ট্রেন ধরে কলকাতা ফেরা।
সেরা সময়: বর্ষা বাদ দিয়ে বছরের যে কোনও সময় যেতে পারেন। উপযুক্ত শীতের পোশাক নিয়ে শীতেও সিলারি অপরূপ। এ সময় মেঘমুক্ত আকাশ থাকে।
ট্যুরিস্ট স্পট: এখানে প্রকৃতি আর পাহাড়ই আপনার সর্বক্ষণের সঙ্গী। পায়ে পায়ে একমাত্র ভিউ পয়েন্ট দেখে নিতে পারবেন। এছাড়া গাড়ি ভাড়া করে ইচ্ছেগাঁও যেতে পারেন। একেবারে সিলারির যমজ ভাই! ফেরার পথে পড়বে সাইলেন্ট ভ্যালি। এখান থেকে রিশপ বেশ কাছে। সেখানে যেতে পারেন। না হলে একটা দিন কালিম্পংয়ে কাটিয়ে সমতলের রাস্তা ধরতে পারেন।
অজয় মুখোপাধ্যায়
ছবি: তাপস কাঁড়ার