আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
সুধা পদ্ধতির মূল বিষয় হল, সুস্থ-সবল চারা তৈরি করা এবং মূল জমিতে গুছিতে একটি করে চারা রোপণ করা। সুধা পদ্ধতিতে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য এক কাঠায় বীজতলা করলেই চলবে। শুষ্ক বীজতলার চারা তুলনামূলকভাবে বেশি প্রতিকূলতা সহ্য করতে পারে এবং বেশি ফলন দেয়। বীজতলায় জৈবসারের সঙ্গে নাইট্রোজেন, ফসফেট, বোরাক্স ও জিঙ্ক সালফেট প্রয়োগ করতে হয়। ইউরিয়া, জিঙ্ক সালফেট ও বোরাক্স-এর দ্রবণ দু’বার স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার সর্বাধিক পাশকাঠি ছাড়ার সময় এবং দ্বিতীয়বার কাচথোড় আসার আগে। রোপণের ২০ দিনের মাথায় একবার নিড়ানি দেওয়া দরকার। কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, সুধা পদ্ধতিতে মূলত দীর্ঘমেয়াদি জাতের ধানের চাষ করা হয়। এই পদ্ধতিতে বীজতলায় যেহেতু জিঙ্ক ও ফসফেট প্রয়োগ করা হয়, ফলে ধানের চারার মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। সেকারণে মূল জমিতে প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেও চারা তা সহ্য করতে পারে। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না।
কৃষি আধিকারিকরা বলছেন, আমনে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য উঁচু জমিতে অঞ্জলি, সোনালি, শতাব্দী, খন্ডগিরি, জারোভা প্রভৃতি জাত লাগানো যেতে পারে। অথবা কৃষি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে অল্পদিনের ধান যা ৯০ থেকে ১০৫ দিনের মধ্যে পাকে, তেমন জাতের ধান চাষ করতে হবে। মাঝারি জমিতে সরজু-৫২, ত্রিগুণা, কাব্য, ললাট অথবা এ ধরনের অন্যান্য প্রজাতির ধান চাষ করা যেতে পারে। এই ধরনের ধান ১১৫ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে পাকে। মাঝারি জমিতে স্বর্ণ মাসুরির চাষ করা যেতে পারে। স্বর্ণ মাসুরির পরিবর্তে প্রতীক্ষা ধানের চাষ করলেও ভালো ফলন পাওয়া যায়। একটু নিচু জমিতে যেখানে একফুট জল জমে থাকে, এমন জমিতে সাবিত্রী, সিআর ১০১০, সিআর১০১৮ প্রজাতির ধান চাষ করা ভালো। নিচু জমিতে যেখানে দেড় ফুট পর্যন্ত জল জমে থাকে, এমন জমিতে যোগেন, তুলসি ও রাজশ্রী প্রজাতির ধান চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবার যেসব জমি খুবই নিচু, যেখানে দেড় ফুট থেকে তিন ফুট পর্যন্ত জল জমে থাকে, এমন জমিতে সবিতা, অমূল্য, পূর্ণেন্দু, নলিনী প্রজাতির ধান চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। যেসব জমিতে তিন ফুটেরও বেশি জল দাঁড়ায়, সেখানে দীনেশ ও জিতেন্দ্র জাতের ধান চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আমন ধান চাষের জন্য এখন থেকেই ধীরে ধীরে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। ভালো ফলন পেতে হলে উন্নত প্রজাতির নিরোগ ও স্বাস্থ্যবান বীজ ব্যবহার করা উচিত বলে জানাচ্ছেন কৃষি আধিকারিকরা। জমি তৈরির সময় অন্তত ছয় ইঞ্চি গভীরতায় তিনটি চাষ দিয়ে মাটি সমান করে নিতে হবে। প্রথম চাষের পর অন্তত সাত দিন বাদ দিয়ে দ্বিতীয় চাষ দিতে হবে। দ্বিতীয় চাষের ঠিক সাত দিন পর তৃতীয় চাষ দিতে হবে। জমি তৈরির সময় শেষ চাষের আগে প্রতি বিঘায় ১২-১৩ কুইন্টাল ভালো মানের জৈবসার প্রয়োগ করতে হবে। আমন ধান চাষে জৈবসার দেওয়ার পাশাপাশি শেষ চাষের আগে প্রতি বিঘায় ৭ কেজি ইউরিয়া, ২৯ কেজি সুপার ফসফেট, ৮ কেজি মিউরিয়েট অফ পটাশ দিতে পারলে ভালো।
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে আমনের বীজতলা তৈরি শুরু করতে পারলে ভালো। আমন ধানে চাপানসার হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে ১৪ কেজি ইউরিয়া। চাপানসার দুই থেকে তিনবার প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া বিঘা প্রতি ৩ কেজি জিঙ্ক সালফেট, ১ কেজি জীবাণুসার এবং তার সঙ্গে এক প্যাকেট ২৫০ গ্রাম অ্যাজোটোব্যাক্টর শেষ চাষের সময় জমিতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারলে ভালো। আমন ধান লাগানোর সময় জমিতে সালফারের অভাব দেখা দিলে বিঘায় আড়াই কেজি সালফার প্রয়োগ করা যেতে পারে। জমিকে সবসময় আগাছামুক্ত করে তবেই আমন ধান লাগানো উচিত বলে জানিয়েছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আমন ধানের ভালো ফলন পেতে অবশ্যই ধানের চারা ভালোভাবে তৈরি করতে হবে। ভালো চারা তৈরি করার জন্য এক বিঘে ধান চাষের জন্য সাধারণত ১০ কেজি পর্যন্ত বীজধান ব্যবহার করা হয়। তবে স্বাস্থ্যবান বীজ হলে চার কেজি বীজই যথেষ্ট। বীজধান এমনভাবে বাছতে হবে যাতে বীজধানে কোনওরকম নোংরা, অপুষ্ট ধান, অন্য ফসলের বীজ, অন্য প্রজাতির ধানের বীজ, দাগযুক্ত বীজ না থাকে। সাড়ে তিন ফুট লম্বা ও সাড়ে তিন ফুট চওড়া বীজতলায় ৫০ গ্রাম নীরোগ, পুষ্ট বীজ ছড়ানো দরকার। সাড়ে তিন ফুট চওড়া ও ৬৫ ফুট লম্বা একটি বীজতলায় এক কেজি বীজ ফেলা যাবে। এইরকম চারটি বীজতলা করলে এক বিঘা জমি রোয়া করা যাবে। প্রতিটি বীজতলায় ৫০ কেজি ভালো মানের জৈবসার, সঙ্গে পরিমাণমতো ইউরিয়া, সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অফ পটাশ ও জিঙ্ক সালফেট ব্যবহার করা দরকার। প্রতি দেড় লিটার জলে এক কেজি বীজধান ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তার পর অঙ্কুর বের হলে বীজতলায় ছড়িয়ে দিতে হবে। স্বল্প মেয়াদি জাতের ধান যেগুলি ১০০ দিনে পাকে, সেগুলির ক্ষেত্রে অবশ্যই ১২-১৩ দিনের চারা ৮ ইঞ্চি দূরে একটি করে চারা রোয়া করতে হবে। অন্য প্রজাতির ক্ষেত্রে চারার বয়স ১৫-১৮ দিন হলে রোয়া করে ফেলতে হবে। রোয়া করার সময় জমিতে মাখা মাখা জল থাকলেই চলবে। জমিতে জল দাঁড় করিয়ে রাখার প্রয়োজন নেই। পাশকাঠি ছাড়ার সময় জমিতে জল যত কম রাখা যায় ততই ভালো। জমি যাওয়ার পর ফাটল ধরার আগেই সেচ দিতে হবে।