হাঁসফাঁস গরম। হিট ওয়েভ চলছে। নেহাত বাধ্য হয়ে ছোটদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন অভিভাবকরা। কিন্তু প্রতি মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় থাকতে হচ্ছে। এদিকে গরমের ছুটি পড়তে এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি। শিশুদের অসুস্থতা এড়াতে কী করবেন এই সময়? পরামর্শে বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরুণ মাঙ্গলিক।
আমাদের আজকের আলোচনা মূলত টক দই নিয়ে। টক দই সাধারণত শুভ্র বর্ণের হয়। অনেকের আবার সাদা দই এবং ইয়োগার্ট নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ইয়োগার্ট এবং দই-এর প্রস্তুতির মধ্যে একটু ছোট্ট পার্থক্য আছে।
সম্প্রতি বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অনুষ্ঠিত হল বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সম্মেলন ‘কাহোকন ২০২৪’। এই উপলক্ষে এক সাংবাদিক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ডাঃ বিজয় আগরওয়াল, ডাঃ লালু জোসেফ, রূপক বড়ুয়া, ডাঃ শংকর সেনগুপ্ত প্রমুখ।
পরামর্শে হাওড়ার নারায়ণা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের বিশিষ্ট রোবটিক সার্জেন ডাঃ পার্থপ্রতিম সেন ও বিশিষ্ট জিআই ও ক্যানসার সার্জেন ডাঃ শুদ্ধসত্ত্ব সেন।
পরামর্শে বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরূপ দাসবিশ্বাস
ব্যবসার গতি ও বেচাকেনার সঙ্গে লাভও বাড়বে। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। শত্রু সংখ্যা বাড়বে। ... বিশদ
পরিবেশে গরম খুব বেড়ে গেলে শরীর থেকে জল যেমন বেরিয়ে যায় তেমনই সোডিয়াম পটাশিয়ামের মতো ইলেকট্রোলাইটসও বেরিয়ে যায়। হিট সিনকোপ, একজশ্চন, হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়ে। প্রশ্ন হল এমতাবস্থায় কোনও ব্যক্তির ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির অসুখ, লিভারের অসুখ, স্থূলত্বের মতো কো মর্বিডিটি থাকলে তিনি করবেন কী?
সুগারের রোগীর যত্ন
সাধারণ মানুষের প্রথম যে প্রশ্নটা থাকে তা হল ডায়াবেটিসের রোগীর যদি প্রচণ্ড ঘাম হয়, অস্বস্তি হয় তাহলে কি তিনি ওআরএস পান করতে পারেন? উত্তর হল, হ্যাঁ পারেন এবং পান করা অত্যাবশ্যক। কারণ যে সোডিয়াম শরীর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে তার ঘাটতি দ্রুত পূরণ হতে পারে একমাত্র ওআরএস-পানের মাধ্যমে। তবে সুগারের রোগীকে ওই দিন ভাত, রুটি বা আলুর মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য কম খেতে হবে।
সতর্ক হতে হবে ওষুধ সেবন নিয়েও। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বেশ কিছু ওষুধ আছে যেগুলি ডাইইউরেটিক। অর্থাত্ শরীর থেকে তরল নিষ্কাশনের মাধ্যমে সুগার বের করে দেয়। গ্রীষ্মকালে চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের ওষুধ যথাসম্ভব কম খেলেই ভালো হয়।
ব্লাড প্রেশার, হার্ট, কিডনি,
হাই ব্লাড প্রেশার আছে এমন রোগীর ক্ষেত্রে গ্রীষ্মকালে ওষুধ থেকে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার, বিটা ব্লকার জাতীয় ওষুধ চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলে বন্ধ করা যায় কি না তা দেখা দরকার। কারণ এই ওষুধগুলি সেবনের কারণে পেরিফেরাল ব্লাড সার্কুলেশন কমে যায়। এর ফলে শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যেতে বাধা পায়। পেরিফেরাল ব্লাড ভেসলগুলি প্রসারিত হয়ে যায়। সেখানে রক্ত প্রবাহের মাত্রাও যায় বেড়ে। হার্ট তখন স্বাভাবিক উপায়ে পাম্প করতে পারে না। পেরিফেরাল ব্লাড ভেসলগুলিতে ব্লাড সাপ্লাই বেড়ে যাওয়ার কারণে কিডনি, হার্ট লিভারে রক্তপ্রবাহ যায় কমে। তখন বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা, ক্ষতি হতে পারে কিডনিরও। লিভারেরও বিস্তর ক্ষতি হয়। লিভারের কোষগুলি অত্যন্ত তাপ সংবেদী। এই কারণে যাঁর আগে থেকেই লিভার ডিজিজ আছে তাঁর ক্ষতি বেশি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার হাইপার টেনশন নিয়ন্ত্রণের কিছু ওষুধ আছে যেগুলিকে বলে ডাই ইউরেটিক। ওষুধগুলি শরীর থেকে ফ্লুইডও বের করে দেয়। গ্রীষ্মের সময় চিকিত্সকের সঙ্গে কথা বলে এই ধরনের ওষুধের ডোজ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন পড়তে পারে।
কিডনির অসুখ
ক্রনিক কিডনি রোগীর জলপান সীমিত করেন চিকিত্সক। তবে গ্রীষ্মদিনে এই নিয়ম একটু শিথিল করার প্রয়োজন হতে পারে। সেক্ষেত্রে কিডনি রোগীর শুধু জল পান করার তুলনায় বরং ওআরএস পান করা ভালো। কারণ গ্রীষ্মের সময় শরীর থেকে সোডিয়াম হারিয়ে যায় অনেকখানি। ওআরএস এই ঘাটতি পূরণ করতে পারে।
হার্ট ফেলিওর
হার্ট ফেলিওরের রোগীকে অনেকসময় ডাই ইউরেটিক জাতীয় ওষুধ সেবন করতে বলা হয়। গরমকালে এই ধরনের ওষুধ থেকে রোগীর ডিহাইড্রেশন হওয়ার আশঙ্কা এড়ানো যায় না। তাই গরমকালে হার্ট ফেলিওরের রোগী ওষুধ কীভাবে খাবেন তা নিয়ে একবার চিকিত্সকের সঙ্গে কথা নিন।
ভাসকুলার ডিজিজ
অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিসের রোগীর ব্লাড ভেসেল সরু ও শক্ত হয়ে থাকে। ব্লাড সার্কুলেশন এমনিতেই কম থাকে। এরমধ্যে শরীর থেকে জল যদি বেশি বেরিয়ে যায়, তাহলে সেক্ষেত্রে ইস্কিমিক ইনজুরি, গ্যাংগ্রিন হওয়ার আশঙ্কা যায় বেড়ে।
মনে রাখবেন
তাপমাত্রা ৪০.৫ ডিগ্রির উপরে উঠলে হিট একজশ্চন হওয়ার যেমন আশঙ্কা থাকে তেমনই ৪২ ডিগ্রির উপরে উঠলে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা যায় বেড়ে। তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রির উপরে শরীরের কোষেরও ক্ষতি হয়। তাই যথাসম্ভব ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন। বাড়ির বাইরে বেরিয়ে কাজ করতে হলে সকাল সকাল কাজ শেষ করে ঘরে ফিরুন।
লিখেছেন সুপ্রিয় নায়েক
