কর্ম বা গৃহক্ষেত্রে অশান্তি মনঃকষ্ট হতে পারে। পেশাদারী কর্মে সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
শিরিন রং-পেনসিল পেলেই আঁকতে বসে যায়। বাড়ির দেওয়াল ভর্তি নানা আকারের আঁকিবুঁকি, দাগছোপ। দেওয়াল নোংরা করার জন্য বেশ কয়েকবার বকুনিও খেয়েছে। তবু পড়ার খাতার পিছনে, ঘরের দেওয়ালে নানা ছবি আঁকা তার বন্ধ হয়নি।
শিরিনের সঙ্গেই পড়ে আয়ান। ওর আবার ছোট থেকেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেনা মানুষদের নকল করা স্বভাব। স্কুলের আন্টি থেকে পাশের বাড়ির ঠাম্মা কেউ বাদ নেই এই তালিকায়। আয়ানের বাবা-মা বকে বকে হদ্দ। কিন্তু এই অভ্যেস যে আসলে নাটকে চরিত্রাভিনয়ের প্রতি ঝোঁক, তা অনেকেই বোঝেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সব অভ্যেসকে শৈশবের ‘উটকো খেয়াল’ ভেবে ফেললে, সে ভুল অভিভাবকদের। শিশুর উদ্ভাবনী ক্ষমতা বা শখের গোড়া মজবুত করার প্রাথমিক দায়িত্ব কিন্তু মা-বাবার। পারিপার্শ্বিক চাপ ও পরিস্থিতিগত সমস্যায় শিশুর পছন্দের দিকগুলো যেন নষ্ট না হয় তাও দেখতে হবে। বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের মতে, অনেক সময় দেখা যায়, শিশুর আগ্রহ কোন দিকে যাবে, তার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। যে ছেলেবেলায় ছবি আঁকতে ভালোবাসত, একটু বড় হয়ে হয়তো রং-তুলির চেয়ে তাকে ফুটবল বেশি টানছে। এমনটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। মা-বাবাকেই বুঝে নিতে হবে কোনদিকে সে এগতে চাইছে। আগে আঁকলেও কেন এখন আঁকছে না এসব নিয়ে অকারণ চাপ তৈরি করে লাভ নেই।’
কোন বিষয়ে যত্ন নেবেন?
যে কোনও সুস্থ শখের জন্য প্রয়োজন সুন্দর একটি পরিবেশ। সন্তানের যদি নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে আগ্রহ বুঝতে পারেন, তাহলে তা পড়াশোনার সময় ‘নষ্ট’ হিসেবে না ধরে, সেই শখের গোড়ায় জল দিন। সে কয়েন জমানো হোক বা বাগান করা! আপনার ঠিক করে দেওয়া সময় মেপে কিন্তু এসব শখ শুরু হবে না। তাই কোনও ভালো বিষয়ে আকর্ষণ তৈরি হলে উৎসাহ দিন।
শখগুলি বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মা-বাবা মনে করেন, তাঁরা যা ভাবছেন, সেটাই ঠিক। তা না করে কোন বিষয়ে তার আগ্রহ, সে সিদ্ধান্ত সন্তানকেই নিতে দিন।
সন্তান কী ভালোবাসে তা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলুন। বয়সভেদে পছন্দ পাল্টায়। যা ভালোবাসছে, তাতে উৎসাহ দিন। এতে সন্তান নিজের পছন্দের গুরুত্ব বুঝবে। নিজে জীবনে যা করতে পারেননি, তা সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করবেন না। মনে রাখবেন, দু’জন আলাদা মানুষের পছন্দও আলাদা। জোর করে শখ তৈরি করানো যায় না।
শখ বা নেশাকে গুরুত্ব দেওয়া মানে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে দেওয়া ও প্রশিক্ষকের কাছে ভর্তি করে দেওয়া নয়। বরং খেয়াল রাখুন ওই বিষয়ের কোনও কর্মশালা বা অডিশন কোথাও হচ্ছে কি না। শখ অনুযায়ী বড় বড় শিল্পীদের কাজ দেখান। খেলায় ঝোঁক থাকলে বড় খেলোয়াড়দের জীবনী পড়তে উৎসাহ দিন। অতীতের খেলাগুলি ডিজিটাল ভার্সনে দেখার সুযোগ করে দিন। বই পড়াই নেশা থাকলে বাড়িতে নানারকম বই কিনে দেওয়ার সঙ্গে স্থানীয় লাইব্রেরির সদস্য করে দিন। এতে বই খুঁজে পড়ার অভ্যেস তৈরি হবে। লিখতে ভালোবাসলে রোজ বিভিন্ন বিষয়ে লিখতে উৎসাহ দিন। ছোটদের নানা পত্র-পত্রিকায় সেসব লেখা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। নির্বাচিত না হলেও উৎসাহে যেন ঘাটতি না আসে। এমনকী, বাগান করতে ভালোবাসলে তাকে নার্সারিতে নিয়ে যান।
অনেক কিশোর-কিশোরীর ক্যুইজে অংশ নেওয়াই নেশা হয়। সেক্ষেত্রে নানা বইপত্র কিনে দেওয়ার পাশে সায়েন্স সিটি, বিড়লা তারামণ্ড-সহ নানা শিক্ষণীয় জায়গায় এদের বেড়াতে নিয়ে যান।
চার দেওয়ালের মধ্যে শিশুকে বদ্ধ রাখবেন না। বাইরের দুনিয়া না দেখলে তাদের কল্পনাশক্তিও এগবে না। তাই সপরিবার মাঝেমাঝে ঘুরতে যান।
অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনা করবেন না। ‘ও কী সুন্দর ছবি আঁকে, তুই কী সারাদিন ডাকটিকিট জমাস’— এসব কথা একেবারেই চলবে না। এক একজনের এক একটি শখ ও ভিন্ন দক্ষতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সন্তানের আকর্ষণকে বিকশিত হতে দিন নির্দ্বিধায়।
শখ কেরিয়ার নাও হতে পারে। বরং না হওয়াই স্বাভাবিক। তাই বাগান করে কী হবে বা কয়েন জমিয়ে কী করবি, এসব ভুল ধারণা শিশুর মনে গেঁথে দেবেন না। বরং পড়াশোনার পাশে সে ফুরসতও ওকে দিন।