দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় ও ব্যবসা থেকে অর্থাগম যোগ। প্রেমের প্রস্তাব পেতে পারেন। পুজো পাঠে মন। ... বিশদ
আজ থেকে চারমাস বাদেই একটা নতুন সরকার বসবে (মানুষের রায়ে)। এখন থেকে ৩০ এপ্রিলের ভিতর বর্তমান সরকার আর এমনকিছু করবে না, যাতে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আমূল বদলে যাবে। সুতরাং ২০১৯-এর গোড়ার পরিস্থিতিতেই নতুন সরকার দায়িত্ব নেবে। অর্থনীতির পরিস্থিতিটা বুঝে নেওয়া যাক।
ফিসকাল সুস্থিতি
দুটো সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সূচক উদ্বেগজনক। সরকার গত বছর ফিসকাল ঘাটতি (এফডি) পূরণের লক্ষ্যে পৌঁছায়নি এবং ২০১৮-১৯ সালের ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যটাও পূরণ হবে বলে মনে হয় না। প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে (নিট) এবং জিএসটি’তে কেন্দ্রের অংশ আদায়ে আপাতভাবে ঘাটতি পড়তে চলেছে। জিএসটি কমপেনসেশন রিজার্ভ ভেঙে, ‘ফক্স’-বিলগ্নীকরণের মাধ্যমে এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরকে ‘রাজি করিয়ে’ অন্তর্বর্তীকালীন ডিভিডেন্ড বাবদ ২৩ হাজার কোটি টাকা নিয়ে সরকার কিছু অর্থের সংস্থান করার ব্যাপারে আশাবাদী।
কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি (সিএডি) একটা হেরে যাওয়া লড়াই। ২০১৭-১৮ সালে জিডিপি-র ১৯ শতাংশ সিএডি ছিল, ২০১৮-১৯ সালে সেটা নিশ্চিতভাবে ২.৫ শতাংশ থেকে ৩.০ শতাংশে পৌঁছাবে। গত ডিসেম্বরে পণ্য রপ্তানি ০.৩৪ শতাংশ বেড়েছে এবং আমদানি ২.৪৪ শতাংশ কমেছে, তবু বাণিজ্য ঘাটতি রয়ে গিয়েছে ১৩.০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পরবর্তী ফিসকাল ইয়ার শুরু হবে আরও ঋণ এবং বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ের ঘাটতি নিয়ে।
বৃদ্ধির নিম্ন হার
৮ নভেম্বর ২০১৬, অর্থাৎ ২০১৬-১৭ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (কোয়ার্টার) বিমুদ্রাকরণ করা হয়েছিল। ডিসেম্বর ২০১৬-র শেষ অবধি মোট এগারোটা ত্রৈমাসিকে জিডিপির বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৭ শতাংশ। পরবর্তী সাতটা ত্রৈমাসিকে সেপ্টেম্বর ২০১৮ শেষে বৃদ্ধির হার ৬.৮ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৮-১৯-এর প্রথমার্ধে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৬ শতাংশ কিন্তু সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্স অফিসের (সিএসও) অনুমান হল দ্বিতীয়ার্ধে এটা ৭ শতাংশে নেমে আসবে।
বৃদ্ধির এই যে নিম্ন হার তার জন্য বিনিয়োগের নিম্ন হার দায়ী, বিশেষ করে বেসরকারি ক্ষেত্রে। গত তিন বছরে গ্রস ফিক্সড ক্যাপিটাল ফর্মেশনের (জিএফসিএফ) হার ২৮.৫ শতাংশে থমকে গিয়েছে এবং ২০১৮-১৯ সালেও এই হার মোটামুটি একইরকম রয়ে যাবে। নতুন চাকরি-বাকরির সুযোগ তেমন একটা যে হয়নি তার মূল কারণ হল বৃদ্ধির এই নিম্ন হার।
সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি’র (সিএমআইই) তথ্য মানলে বলব যে, শুধু চাকরি না-হওয়াই নয়, ২০১৮ সালে ১ কোটি ১০ লক্ষ চাকরি খোওয়াও গিয়েছে। বেকারত্বের বর্তমান হার ৭.৩ শতাংশ।
কৃষি ক্ষেত্রের দুর্দশা
কৃষি ক্ষেত্রের প্রতিটি সূচক কৃষকদের দুর্দশার কথাই গুরুত্বসহকারে নির্দেশ করে। এনডিএ-র চার বছরে ক্ষেত্রীয় বৃদ্ধির হার যথাক্রমে এই রকম: -০.২, ০.৬, ৬.৩ এবং ৩.৪ শতাংশ। দ্য ইকনমিক সার্ভে ২০১৭-১৮-তে স্বীকার করা হয়েছে যে, চারবছর পর, ‘প্রকৃত কৃষি জিডিপির স্তর এবং প্রকৃত কৃষি থেকে আয়ের নড়চড় হয়নি।’ কৃষকের উদ্বেগপূর্ণ কান্নাতেই বাস্তবের প্রতিফলন ধরা পড়েছে: কৃষিপণ্যের পাইকারি দাম পড়ে গিয়েছে (সর্বশেষ উদাহরণ হল পেঁয়াজ); ন্যূনতম সহায়ক দামটা (এমএসপি) বস্তুত অলীক কিছু একটা এবং বেশিরভাগ কৃষকই এর সুবিধা পাচ্ছেন না; শস্যবিমা স্কিম কৃষকদের লুট করেছে এবং সংশ্লিষ্ট বিমা সংস্থাগুলিকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দিয়েছে; ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পটা (এমজিএনআরইজিএ) আর গরিব লোকের চাহিদা-ভিত্তিক নেই এবং এই প্রকল্পে প্রয়োজনের তুলনায় কম অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে; কৃষি ক্ষেত্রে গ্রস ক্যাপিটাল ফর্মেশন (জিসিএফ) ২০১৫-১৬ সালে ছিল -১৪.৬ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ সালে সেটা ১৪ শতাংশ বাড়ল, তার মানে ২০১৪-১৫ সালের লেভেলেই রয়ে গেল; বিপুল ঋণের ভারে কৃষকরা এমন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল যে কৃষিঋণ মকুব করাটা জরুরি হয়ে পড়েছিল; এবং একজন কৃষকের গড় পারিবারিক আয় ৮,৯৩১ টাকায় নেমে গিয়ে তারা গরিবির চক্করের মধ্যে পড়ে গেল।
শিল্প ও রপ্তানি
মাঝারি আয়ের উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার পথ হল শিল্পায়ন। কৃষি ক্ষেত্র ৪৫ শতাংশ কর্মক্ষম মানুষের কাজের ব্যবস্থা করতে পারবে না; এটা ৬০ শতাংশ মানুষের বেঁচে থাকার প্রধান উপায়ও হতে পারবে না। শিল্প এবং রপ্তানি বাণিজ্যই কেবল এটা পারে। দুটোই এখন ঝিমিয়ে পড়েছে। শিল্পোৎপাদনের সূচক ১২২.৬ (এপ্রিল ২০১৮) থেকে ১২৬.৪ (নভেম্বর ২০১৮)-এ রয়ে গিয়েছে। প্রায় ৯২৭টা প্রজেক্ট থমকে রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে ৬৭৪টা রয়েছে প্রাইভেট সেক্টরে। সিএমআইই অনুসারে জানানো যায় যে, বিনিয়োগের পরিমাণ (ইনভেস্টমেন্ট ইনটেনশনস) ২৫,৩২,১৭৭ কোটি টাকা (২০১০-১১ সাল) থেকে ১০,৮০,৯৭৪ কোটি টাকায় (২০১৭-১৮ সাল) নেমে এসেছে। এটাই মনে হচ্ছে যে ব্যাঙ্কগুলো শিল্প ক্ষেত্রে ঋণ দিতে যতটা সম্ভব অনাগ্রহী হয়ে পড়েছে এবং শিল্পপতিরাও ঋণ গ্রহণে আগ্রহ হারিয়েছেন। এপ্রিল-জুন ২০১৬ থেকে শিল্প ক্ষেত্রে ঋণদানের হার (ক্রেডিট গ্রোথ) সাংঘাতিক রকমের কম ছিল। উপর্যুপরি চারটি ত্রৈমাসিকে এই হারটা ছিল নেতিবাচক (নেগেটিভ) এবং দশটা ত্রৈমাসিকের ভিতর মাত্র দুটোতে ছিল ২ শতাংশ। রপ্তানির পারফর্ম্যান্স ছিল একেবারে বাজে। এনডিএ আমলের চারবছরের কোনও বার পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৩১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেনি। ২০১৩-১৪ সালের ৩১৫ বিলিয়ন ডলারের সাফল্যের সঙ্গে তুলনা করলে রপ্তানি বৃদ্ধির হার এখন নেতিবাচক। এই আমলে বিপন্ন রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে রয়েছে ‘বয়ন ও সহযোগী পণ্য’ (টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যালায়েড প্রডাক্টস) এবং রত্ন ও অলঙ্কার (জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি)-এর মতো
দুটি শিল্প—যেখানে বিপুল পরিমাণে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে।
ভারতকে দুনিয়া কীভাবে দেখছে
ভারতের সম্ভাবনার কথা দুনিয়া স্বীকার করে কিন্তু আজকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দেখে তারা হতাশ। ২০১৮-১৯ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ফরেন পোর্টফোলিয়ো ইনভেস্টর (এফপিআই) এবং ফরেন ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টর (এফআইআই) অর্থাৎ বিদেশি লগ্নীকারীরা মিলিতভাবে ৯৪,২৫৯ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে—ইকুইটিতে এবং ঋণে প্রায় সমান সমান হারে। ২০১৮ সালে ৩১ ডিসেম্বর ‘সভরিন বন্ড রেট’ ছিল ৭.৩ শতাংশ। স্পষ্টত, ‘সবচেয়ে দ্রুতগতির অর্থনীতি’ (ফাস্টেস্ট গ্রোয়িং ইকনমি)-র বড়াই শোনার কেউ নেই বাকি দুনিয়ায়।
২০১৯-এর মে মাসে দেশবাসী যে সরকার নির্বাচন করে দেবে আমাদের আশা ও বিশ্বাস তার উপরেই রাখব।