সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
বেদান্ত বেদের নির্যাস। সনাতন বেদ হিন্দু-জাতির মূল ধর্মশাস্ত্র। হিন্দুধর্মের যত কিছু ধর্মতত্ত্ব, জীবনাদর্শ, তাহার মূল বেদ। বেদান্তের বার্তা বিশ্বমানবের জন্য। নিখিল বিশ্বের নরনারীকে বেদান্ত ডাকিতেছেন মধুময় আহ্বানে — ‘শৃণ্বন্তু বিশ্বে অমৃতস্য পুত্রাঃ’। হে অমৃতের পুত্রগণ শোনো। বেদান্ত আমাদের স্বরূপ উদ্ঘাটিত করিয়াছেন — ‘অমৃতের পুত্রগণ’ এই সম্বোধন করিয়া। তথাপি আমাদের সকলেরই জীবনে দুঃখ আছে। এই দুঃখ কেহই চাহে না। সংসারের সকল নরনারীরই একটি জপমন্ত্র ‘দুঃখং মে মা ভূৎ, সুখং, মে ভূয়াৎ’— যেন দুঃখ না পাই, যেন সুখে থাকি। দুঃখের গ্রাহক নাই। প্রত্যেকটি মানুষই সুখার্থী, অথচ দিনরাত সুখ সুখ করিয়া সুখের পিছনে ছুটিয়াও কেহ সাক্ষ্য দিতেছে না যে, সে খুব সুখে আছে। বেদ বলেন, মানবীয় চেষ্টায় দুঃখ কিছু কমিবার নয়। কিছু কমে সাময়িকভাবে, আংশিকভাবে। শ্রুতি বলেন, আমার কথা যদি শোনো, তাহা হইলে আত্যন্তিক দুঃখ-নিবৃত্তি হইবে। সকল দুঃখ যাইবে একেবারেই। বেদ দুঃখের কারণ বাহির করিয়াছেন ও দূরীকরণের উপায় বলিয়াছেন। দুঃখের কারণ অল্পে সুখানুসন্ধান। কিন্তু বেদ বলেনঃ “যদ্বৈ ভূমা তৎ সুখং, নাল্পে সূখমস্তি, ভূমৈব সুখং, ভূমা ত্বেব বিজিজ্ঞাসিতব্য ইতি”—অল্পে সুখ নাই। ভূমাই সুখ। ভূমার সন্ধানই করিতে হইবে। ভূমার সঙ্গে যুক্ততায় সুখের উদয়, দুঃখের নিবৃত্তি। দুঃখের মূল কারণ অল্পতা ক্ষুদ্রতা। মানব যে দুঃখী তাহার কারণ এই যে, সে নিজেকে বড় ছোট করিয়াছে, অত্যন্ত গণ্ডীবদ্ধ করিয়াছে। সংকীর্ণতা সীমাবদ্ধতা সকল দুঃখের জনক।
মানব! তোমার পরিচয় জিজ্ঞাসা করিলে তুমি হয়তো একটি পাড়ার নাম কর। তুমি যখন পাড়ায় জন্মিয়াছ তখনই একটি জেলায় একটি প্রদেশে বা একটি দেশে বা পৃথিবীতে জন্মিয়াছ। তুমি একটা পল্লী-সচেতন না হইয়া একটা দেশ-সচেতন হইতে পার। দেশ-সচেতন না হইয়া বিশ্ব-সচেতন হইতে পার। নিজেকে বড় করিয়া দেখ — নিজেকে বিশ্ববাসী বলিয়া ভাবো। নিজেকে যত ছোট করিয়া দেখিবে, ততই দুঃখে ডুবিবে। যত বড় করিয়া জানিবে, ততই দুঃখের মাত্রা কমিয়া গিয়া সুখের উদয় হইবে। আমরা স্বরূপতঃ বড়ই আছি, কিন্তু বড় চেতনায় সজাগ নাই। নিজেকে বড় করিয়া জানিবার উপায় বড়র সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তুমি যত বড়র সঙ্গে যুক্ত হইবে তত বড় হইবে। যিনি সর্বাধিক বড়, — বৃহত্তম, তিনি ভূমা। ভূমার সঙ্গে যুক্ত হইলেই ভূমা হইবে। ভূমাই সুখের নিলয়, ভূমাতেই দুঃখের নিবৃত্তি। সুতরাং দুঃখী জীবের জানিবার বস্তু— জিজ্ঞাসা করিবার বিষয় শুধু ভূমা।
ভূমার অপর নাম ব্রহ্ম। বৃহত্ত্বাদ্ ব্রহ্ম। যিনি সবচেয়ে বড়, যাঁহার বৃহত্ত্ব সর্বাতিশায়ী, তিনি ব্রহ্ম। শুধু তাহাতেই নহে। ব্রহ্ম শুধু বড়ই নহেন। তিনি অপরকেও বড় করেন। বৃংহণত্বাদ্ ব্রহ্ম। যিনি আসেন ব্রহ্মের সংস্পর্শে, তিনিও বড় হইয়া যান। ব্রহ্মের কথা বলিলে, ভাবিলে, ধ্যান করিলে, অনুধাবন করিলে, বড় হওয়া যায়। বড় হইলেই দুঃখ যায়। এই ব্রহ্মের সংবাদ লইয়াই ব্রহ্মসূত্র। ব্রহ্মসূত্রের অপর নাম বেদান্তসূত্র।