রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
সেন্টার ফর দ্য স্ট্যাডিজ অব ডেভেলপিং সোসাইটি, সংক্ষেপে সিএসডিএস কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সহায়তা প্রাপ্য একটি সমীক্ষক সংস্থা। লোকসভা ভোটের প্রেক্ষিতে গত এক সপ্তাহে ১৯টি রাজ্যের ৪০০টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের প্রায় ১১ হাজার মানুষের সঙ্গে কথা বলে একটি নমুনা সমীক্ষা রিপোর্ট তৈরি করেছে এই সংস্থা। ভোটারদের কাছে তাদের প্রশ্ন ছিল সোজাসাপ্টা—এই নির্বাচনে প্রধান ইস্যুগুলি কী কী? উত্তরে যা উঠে এসেছে, তাতে ঠান্ডা ঘরে বসে থাকলেও মোদি-অমিত শাহদের কপালে ঘাম দেখা দিতে পারে। সমীক্ষায় ৭১ শতাংশ মানুষ বলেছেন, অত্যধিক মূল্যবৃদ্ধিতে সংসার চালানোই তাদের কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত গত সপ্তাহে ভারতের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে নেই। বরং তা আরও বাড়তে পারে। এতদিন বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, বেকারত্ব মোদি জমানায় রেকর্ড ছুঁয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্টও বলছে, গ্রাম-শহর মিলিয়ে ৬২ শতাংশের বক্তব্য, একটা স্থায়ী চাকরি বা নিয়মিত কাজ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবিকার সন্ধান করে উপযুক্ত পেশার কাজ পাননি ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ। কেন্দ্রীয় স্তরের সংস্থা সিএমআইআই বলেছে, গত দশ বছরে দেশে বেকারত্ব দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৪-তে যা ছিল ৫.৪৪ শতাংশ, ২০২৩-এর নভেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.২ শতাংশ। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, ভারতে কর্মহীনদের মধ্যে ৮০ শতাংশ যুব সম্প্রদায়। স্নাতক বেকারের সংখ্যা ১৩.৪ শতাংশ। সিএসডিএস-এর সমীক্ষায় হিন্দুত্ব, রামমন্দির, দুর্নীতিদমন, বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তির মতো বিজেপি’র হাতেগরম নির্বাচনী ইস্যুগুলিকে গুরুত্ব দিয়েছেন সর্বোচ্চ ৮ শতাংশ (মাত্র) ভোটার। মোদি সরকারের অন্যতম দাবি, উন্নয়ন। ‘আচ্ছে দিনের’ স্বপ্ন দেখিয়ে পাঁচ বছর আগে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদি। কিন্তু সমীক্ষার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রায় হল, এই জমানায় উন্নয়ন হয়েছে শুধু ধনীদের।
আসলে এটাই মোদি সরকারের প্রকৃত ছবি। ‘বিশ্বগুরু’ হয়ে ওঠার পথ দেখাতে ব্যস্ত যারা তাদের রাজত্বে দেখা যাচ্ছে, ২০২৩-এর মানবউন্নয়ন সূচকে বিশ্বের ১৯১টি দেশের তালিকায় ভারত রয়েছে ১৩২-এ। ক্ষুধাসূচকে ১২৫টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ১১১তম। আর মাথাপিছু আয়ে বিশ্বের ১৮৯টি দেশের মধ্যে ভারত রয়েছে ১৪১তম স্থানে। আয়ের মাপকাঠিতে জনসংখ্যার ১ শতাংশ ধনকুবের দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদের মালিক। অথচ গড়পড়তা আম জনতার আয় কমেছে। এই ছবিটা আদৌ ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়ে গর্ব করার মতো নয়। আর গণতন্ত্র! সম্প্রতি লন্ডনের একটি সংস্থা সমীক্ষা রিপোর্টে বলেছে, ভারত ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ থেকে ‘ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র’-তে নেমে গিয়েছে। ভারতের স্থান এখন ৪১তম। এ সবই আসলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ‘অমৃতকাল’-এর নির্যাস। সন্দেহ নেই, ৪০০ আসন জেতার ঘোষণা করলেও মোদি-শাহদের চোরাবালিতে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। মন্দির না মূল্যবৃদ্ধি, হিন্দুত্ব না বেকারত্ব—শেষ বিচারের ভার সেই জনতার হাতে।