সব কর্মেই অর্থকড়ি উপার্জন বাড়বে। কর্মের পরিবেশে জটিলতা। মানসিক উত্তেজনা কমাতে চেষ্টা করুন। ... বিশদ
১৯০৯ সালে মন্মথনাথ ঘোষ নামে এক উদ্যোগপতি চিরুনি শিল্প সংক্রান্ত শিক্ষা লাভ করতে জাপান গিয়েছিলেন। তারপর দেশে ফিরে ‘অরিজিন্যাল কম্ব ফ্যাক্টরি’ নামে একটি কারখানা স্থাপন করেন যশোরে। পরবর্তীকালে তাঁর আত্মীয় নলিনীবিহারী মিত্র বনগাঁতে চিরুনি কারখানা স্থাপন করেন। তাঁর হাত ধরেই এখানকার চিরুনির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। শিল্পের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে তার ব্যাপ্তিও বাড়ে। তাই হল। গোটা বিশ্ব জেনে গেল বনগাঁর চিরুনির কথা। তবে এই অঞ্চলের সেলুলয়েড চিরুনি একসময় খ্যাতি অর্জন করলেও তা প্লাস্টিকের কাছে হার মানে। কম দামের প্লাস্টিকের চিরুনির চাহিদা বাড়লে ক্রমশ চাহিদা কমতে থাকে সেলুলয়েডের দামী চিরুনির। ফলে বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিতে বিকল্প হিসেবে জাপান থেকে নাইট্রেট সিট এনে চিরুনি তৈরি শুরু হয় বনগাঁয়। সে সিট দিয়ে বেরত কর্পূরের সুগন্ধ। শ্রমিকদের শরীরে কর্পূরের গন্ধ মাখামাখি হয়ে যেত। তবে বর্তমানে যে গুটিকয় কারখানা বেঁচে রয়েছে তারা অ্যাসিটেড সিট দিয়ে চিরুনি তৈরি করে। সেলুলয়েডের দিন পুরোপুরি গিয়েছে।
১৯৬২ সাল থেকে চিরুনি কারখানায় কাজ করছেন অনিল পাল নামে কর্মী। তিনি বলেন, ‘এক সময় কারখানাগুলি জমজমাট থাকত। এই শিল্প আজ শেষের পথে। নতুন করে কেউ আর এই কাজে আসে না। ভোট আসে যায়, নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু চিরুনি শিল্পের উন্নয়ন আর হয় না।’ জানা গিয়েছে, এখনও বনগাঁর চিরুনি চেন্নাই, হায়দরাবাদ, মুম্বই সহ দেশের বহু শহরে এমনকী বিদেশেও রপ্তানি হয়। পলাশ কর্মকার, জগন্নাথ সরকার, দীপক সরকার, সুশীল চট্টোপাধ্যায় নামে কর্মচারীদের দাবি, ‘নেতারা এই শিল্পের দিকে নজর দিলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়।’ আইএনটিটিইউসি পরিচালিত বনগাঁ সেলুলয়েড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন সেন বলেন , ‘শ্রমিকরা অবসরের পর যদি সরকারি সহায়তা পান তাহলে এই শিল্পের প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়বে। সরকার সেদিকে নজর দিক।’
সে একসময় ছিল যখন সাহাদের চিরুনি কারখানা গমগম করত। সেটির মালিকানা বদল হয়েছে। হু হু করে কমেছে শ্রমিকের সংখ্যা। হাতেগোনা কয়েকজন মাত্র এখন কারখানায় কাজ করেন। সে কারখানার পাশে ছিল হকি বুড়োর চায়ের দোকান। সেখানে বিশাল সসপ্যানে দুধ ফুটেই চলত। দু’টি কেটলির মুখ থেকে শোঁ শোঁ করে জল ফুটে বাষ্প বের হত সারা দিন। চায়ের সঙ্গে শ্রমিকরা রুটি, ঘুগনি খেতেন। সন্ধ্যায় হতো ঝালমুড়ি। সারাদিন লেগে থাকত ভিড়। এখন দোকানদার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকেন। সর্বক্ষণই খাঁ খাঁ করে জায়গাটি।