বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
চিত্র-২: মঙ্গলবার হাসপাতালে প্রসব করেছেন ভাতারের আলিনগরের বাসিন্দা জেসমিনা বেগম। স্বামী আব্দুল সুকুর স্ত্রীর জন্য জিনিসপত্র এবং সদ্যোজাতের জন্য জামা কিনে ভিতরে ঢুকতে যেতেই বাধা। স্ত্রী ও সদ্যোজাতের কাছে পৌঁছনোর জন্য নানা চেষ্টা করেও ব্যর্থই হলেন।
চিত্র-৩: দুর্গাপুরের মুচিপাড়ার সুব্রত ঘোষ ও মামণি ঘোষের দেড় মাসের শিশু অসুস্থ সত্ত্বেও কোনও চিকিৎসাই হল না। কলকাতায় রেফার করে দায় সারলেন চিকিৎসক। মামণির পক্স ছিল। সেজন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকরা জোড়া ইঞ্জেকশন দেওয়ার পর থেকে শিশুর দু’টি পা মোড়া অবস্থায় রয়েছে। সোজা হচ্ছে না। বুধবারই তাকে কলকাতায় রেফা করে দেওয়া হল।
বুধবার সকাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের গেটে দাঁড়িয়ে থেকে অসংখ্য রোগীকে ফিরে যেতে দেখা গিয়েছে। তাদের মধ্যে শিশু, মাঝবয়সি এবং বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষজন আছেন। দুর্ঘটনার জখম ব্যক্তিকে অ্যাম্বুলেন্সে চড়িয়ে হাসপাতালে আনা হলেও গাড়ি ভিতরে ঢুকতেই পারেনি। প্রখর রোদের মধ্যে অনেক শিশুকে নিয়ে বাবা মায়েরা হাসপাতালের ঘোরাঘুরি করছিলেন। ভাতারের সাহেবগঞ্জ থেকে এক দম্পতি আড়াই মাসের শিশুকে এনেছিলেন। এদিন চেকআপ ছিল। ওই দম্পতি বলেন, এদিন আউটডোর বন্ধ থাকবে বলে জানতাম না।
মঙ্গলবার সকালেই সাময়িক আউটডোর বন্ধ করে আন্দোলনে নেমেছিলেন ইন্টার্নরা। তারপর ইমার্জেন্সি বিভাগে চিকিৎসা হয়েছে। যদিও ইন্টার্নদের কর্মবিরতি ছিল। সন্ধ্যার পর ইমার্জেন্সিতে তালা মেরে দেওয়া হয়। রাতভর ইমাজেন্সি বিভাগ বন্ধ ছিল। রাতে জুনিয়র চিকিসকরা লাঠি হাতে নিয়ে গোটা ক্যাম্পাসে দাপিয়েছেন বলে অভিযোগ। রোগীর বাড়ির লোকজন বাইরে বের করে দিয়েছেন। তারপর বুধবার সকাল থেকেই জুনিয়র ডাক্তাররা দলবেঁধে হাসপাতালে ঢোকার তিনটি মূল গেটে বাঁশ দিয়ে আটকে দেন। একমাত্র চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্মী ছাড়া অন্য কাউকে ভিতরে ঢোকার অনুমতি দেয়নি। অভিযোগ, জুনিয়র চিকিৎসকরা দিনভর দাদাগিরি করেছেন।
তবে, জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বেশকিছু সদস্যের শত্রুতা আগে থেকে ছিল। এরআগে হাসপাতালের গেটের কাছেই এক মহিলা চিকিৎসক শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছিলেন। স্থানীয়দের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেই শত্রুতা থেকেই এদিন আচমকা জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ। বিশেষ করে বাথানপাড়া এলাকার কিছু যুবক এদিন অবরোধ এবং হামলায় নেতৃত্ব দিয়েছে। তবে, প্রত্যেকেই চাইছেন, দ্রুত বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিষেবা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুক। কারণ, পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানের পাশাপাশি বীরভূম, হুগলির আরামবাগ সহ ঝাড়খন্ডের একটা অংশ থেকেও রোগীদের ভরসা এই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। এখানে স্বাভাবিক কাজকর্ম না হলে হাজার হাজার মানুষ বিপদে পড়ছেন। পূর্ব ঘোষণা মতো রোগীর ওটি হচ্ছে না। রোগীর দুর্ভোগ বাড়ছে। অসুস্থ শিশুরা পরিষেবা পাচ্ছে না। প্রাইভেট চেম্বারে দেখানোর মতো অনেকেই কাছে টাকা নেই। বাবা মায়েরা করুণ মুখে ফিরে যাচ্ছেন। অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহার হোক, এমনটাই চাইছেন সাধারণ মানুষজন।