বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
ঠিক যে জায়গায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গত শুক্রবার রাতে দুই দাঁতালের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানেই মাটি-ইট দিয়ে বেদি তৈরি করে হাতির মাটির মূর্তি এনে পুজো হল। ফুল-বেলপাতা সহযোগে পড়া হল মন্ত্রও। দুপুরে অন্নভোগের আয়োজন করা হয়েছিল। এলাকার লোকজনই চাঁদা তুলে সবকিছুর ব্যবস্থা করেছেন। নেপুরায় এদিন কয়েক হাজার লোকের জমায়েত হয়। হাতির হানায় এত ক্ষতির পরেও এদিন এই পুজো ঘিরে এলাকাবাসীর উৎসাহের অভাব ছিল না। চাষের কাজ ফেলে পুরুষরা যেমন বাজার সেরে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন, তেমনই বাড়ির গৃহবধূরাও পুজোর আয়োজনে সকাল থেকেই ব্যস্ত ছিলেন। চণ্ডীপাঠ, হরিনাম সংকীর্তনও হয় এদিন। ছিলেন বেশ কয়েকজন পুরোহিতও। খোল করতাল নিয়ে শঙ্খ-কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে পুজো চলে।
পুজোর এক ফাঁকে পুরোহিত লালু ঠাকুর বলেন, দু’টি হাতি পর পর মারা গিয়েছে। তাদের আত্মার শান্তির জন্যই এই আয়োজন। হাতি আমাদের কাছে দেবতা। গীতাপাঠ, চণ্ডীপাঠ, নরনারায়ণ সেবা করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে আমাদের কামনা, হাতি দেবতা যেন রাগের বশে কারও কোনও ক্ষতি না করেন।
জঙ্গলমহলে হাতি, ঘোড়ার পুজোর প্রচলন বহু দিনের। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় গেলেই হাতি, ঘোড়ার পুজোর চিত্র দেখা যায়। হাতির মৃত্যুর পর এরকম বেদিও তৈরি হয়েছে শালবনী, গড়বেতা, গোয়ালতোড়ের মতো একাধিক জায়গায়। কিন্তু, এত বড় আয়োজন তেমন চোখে পড়ে না। আবার জঙ্গল লাগোয়া একাধিক মন্দিরে ‘বামুনবুড়ি’ দেবীকেও পুজো করা হয়। মন্দিরে ভিতরে দেবীর কোনও মূর্তি না থাকলেও কতকগুলি ঘোড়া ও হাতির মূর্তি সজ্জিত থাকে। সেটিই জঙ্গলমহলের বাসিন্দাদের রক্ষাকর্তা ‘বামুনবুড়ি’র মন্দির বলে পরিচিত হয়।
এদিন পুজোয় অংশ নেওয়া সন্ধ্যা ঘোষ, মুক্তা ঘোষ বলেন, এখানে তো দু’টি হাতি মারা গিয়েছিল, তাদের আত্মার শান্তি কামনার পাশাপাশি হাতি যাতে আর ক্ষতি না করে, সেই জন্যই পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। মন্ত্রপাঠ, অন্নভোগ সব কিছুরই ব্যবস্থা করা হয়। হাতি আমাদের অনেক ক্ষতি করেছে, একথা ঠিক। কিন্তু এভাবে হাতির মৃত্যু আমরা কখনও চাই না। বাসিন্দা বিভুভূষণ ঘোষ বলেন, আমাদের এলাকায় এরকম অনুষ্ঠান আগে হয়নি। হাতি যেহেতু আমাদের দেবতা, তাই তাদের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান তো আমরা করতে পারি না। এদিন পুজো করেছি।
এদিকে রবিবার রাতে হাতির হানায় শালবনীর চ্যাংশোলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বাড়িঘর ভাঙচুর, ফসল নষ্ট করে হাতি। এলাকায় ১০ থেকে ১২টি হাতির একটি দল রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সুকুমার মাহাত বলেন, রাতে আমরা বাড়িতেই শুয়েছিলাম। একটা আওয়াজ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। জানলা দিয়ে বাইরে তাকানোর পর দেখি, পাশের বাড়িটা একটা হাতি প্রায় ভেঙে দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ছ’টির মতো বাড়িতে হাতি ভাঙচুর চালিয়েছে। জমির ফসলও নষ্ট করেছে। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর রয়েছে। হাতি তাড়াতে সবরকম ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে।