বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
রবিবারের পর থেকে মহম্মদ হাসান বাড়ির বাইরে বেরনোর সাহস করে উঠতে পারছেন না। বেসরকারি ছাপাখানায় কাজ করেন কলম্বোর এই ৪১ বছরের বাসিন্দা। সারাক্ষণ আতঙ্ক কাজ করছে মনে। বাইরে বেরলে যদি বিপদের মুখে পড়তে হয়! দেমাতাগোদা এলাকায় জুম্মা মসজিদে একফাঁকে নামাজ পড়তে এসেছিলেন। হাসানের কথায়, পরিবারের লোকজন উদ্বিগ্ন। বাইরে বেরলে যদি আর বেঁচে ফিরতে না পারি!
রবিবারের ভয়াবহ ধারাবাহিক বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট। শ্রীলঙ্কা সরকারের আশঙ্কা, বিস্ফোরণের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন স্থানীয় কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন এনটিজে। তবে বিস্ফোরণের পর থেকেই এই নাশকতার কড়া নিন্দা করে চলেছে শ্রীলঙ্কার মুসলিম গোষ্ঠীগুলি। কিন্তু তা সত্ত্বেও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ আতঙ্কে ভুগছেন। পাল্টা হিংসার মুখে পড়ার আতঙ্কে কাঁটা হয়ে রয়েছেন তাঁরা। জুম্মা মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন ৬০ বছরের এক বৃদ্ধা। নাম জারিনা বেগম। চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। জারিনার কথায়, সেদিন থেকে ঘুমাতে পারছি না। ভালোই বুঝতে পারছি, মানুষ মুসলিমদের উপর ক্ষুব্ধ। বিস্ফোরণে মারা গিয়েছে মায়ের কোলের শিশুও। চোখ ছলছল করে ওঠে বৃদ্ধার। পরণে কালো পোশাক। মাথায় সাদা হিজাব। কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকেন, ওদের (হামলাকারীদের প্রসঙ্গে) মনে এত ঘৃণা, কল্পনাও করতে পারি না। আমরা মূলত বাড়িতে বন্দি হয়ে পড়েছি। বেরতে ভয় লাগছে।
শ্রীলঙ্কার ২ কোটি ১০ লক্ষ জনসংখ্যার মধ্যে ১০ শতাংশ মুসলিম। সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে হিন্দুদের পরেই রয়েছে মুসলিমরা। জনসংখ্যার সাত শতাংশ খ্রিস্টান। সংখ্যাগরিষ্ট অংশ বৌদ্ধ সিংহলি। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। কিন্তু গোষ্ঠী হিংসার অবসান হয়নি। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে মুসলিমদের দোকানপাটে হামলা চলেছে। হামলা চলেছে গত বছরও। এমনকী গুজব ছড়িয়েছিল, সিংহলিরা মুসলিমদের দোকান থেকে খাবার কিনে খেলে বন্ধ্যাত্বের শিকার হবেন।
রবিবারের হামলার পর থেকে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব রক্ষার ডাক দিয়ে আসছেন শ্রীলঙ্কার নেতারা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমসিঙ্ঘে বলেন, বিস্ফোরণের নিন্দা করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের সিংহভাগ মানুষও। যা ঘটেছে তা নিয়ে সিংহলি ও তামিলদের মতোই ক্ষুব্ধ মুসলিমরাও। কিন্তু সম্প্রীতি রক্ষার এত চেষ্টা সত্ত্বেও বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। যার ভালোই টের মিলছে জুম্মা মসজিদ চত্বরে। নামাজ পড়তে আসা বহু মানুষের একটাই দাবি, সঙ্কটের এই মুহূর্তে প্রতিটি নাগরিকের খেয়াল রাখুক পুলিস।
মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিলমি আহমেদের বক্তব্য, তীব্র আবেগ কাজ করছে মানুষের মধ্যে। পাল্টা হিংসার আতঙ্কে ভুগছেন মুসলিমরা। কয়েকশো মানুষকে সমাধিস্থ করা হয়েছে। মানুষের মনে ক্ষোভ তৈরি হওয়া অমূলক কিছু নয়। আমরা সরকারের কাছে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছি। অন্যান্য মুসলিম নেতাদের মতো আহমেদও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরলেন। তাঁর বক্তব্য, এনটিজে-র কাজকর্ম নিয়ে আমরা বহুদিন আগেই প্রশাসনকে সতর্ক করেছিলাম। সন্দেহভাজন এই সংগঠনটির নেতার নাম জাহরান হাসিম। মুসলিম নেতাদের ছোখে হামিস একজন কট্টরপন্থী ছাড়া আর কিছুই নয়। কোরান পড়ানোর অছিলায় অল্প বয়সিদের মগজ ধোলাই দিয়ে চলেছিল হাসিম।
বিস্ফোরণের জের কী হতে পারে, শ্রীলঙ্কার মুসলিমদের তা ভালোই জানা। জুম্মা মসজিদে দাঁড়িয়ে সার কথাটা বললেন আর এফ আমিন নামে স্থানীয় এক মানুষ। তাঁর বক্তব্য, মুসলিমরা নিরাপত্তা চাইছেন। আতঙ্ক তাড়া করে বেরাচ্ছে আমাদের। মাথায় ফেজ পরা অবস্থায় কাউকে দেখলে ওরা শত্রু ভাবছে। কিন্তু সবাইকে আমরা একটা কথাই বলতে চাই। আমরা তোমাদের শত্রু নই। শ্রীলঙ্কা এশিয়ার মুক্ত নামে পরিচিত। এটা আমাদেরও মাতৃভূমি।