বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
জীবদ্দশায় গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশ ও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের পণ্ডিত মানুষজনকে বিশ্বভারতীতে শিক্ষাদানের জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। ইংল্যান্ড থেকে কৃষিবিদ্যার জন্য এসেছিলেন লেনার্ড এলমহার্স্ট। জাপানি ভাষা শেখাতে এসেছিলেন সানো জিন্নোৎসুখে, ধাত্রীবিদ্যার জন্য আমেরিকা থেকে এসেছিলেন গ্রেচেন গ্রিন। এছাড়া ফ্রান্স থেকে এসেছিলেন বহু ভাষাবিদ সিলভা লেভি, জুডো, সিনজো তাকাগাকি প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। যাঁদের অনেকেই পরবর্তীতে শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমান সময়েও দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছাত্রছাত্রীরা বিশ্বভারতীতে ভর্তি হন পড়াশোনা করার জন্য। ফলে শান্তিনিকেতন বরাবরই মিশ্র সংস্কৃতির কেন্দ্র। নিরাকার ঈশ্বরের প্রার্থনার জন্য শান্তিনিকেতন রয়েছে উপাসনা গৃহ। যেখানে পোশাক বিধি মেনে সব ধর্মের মানুষের অবাধ প্রবেশ। তবে শহর বোলপুরে হিন্দু-মুসলিম ছাড়াও খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি ধর্মাবলম্বীরা রয়েছেন। তারা নিজেদের মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করেন। কিন্তু রামনবমী নিয়ে এর আগে কখনও ঔদ্ধত্যের উন্মাদনা লক্ষ্য করা যায়নি। সম্প্রতি গেরুয়া ফেট্টি কপালে জড়িয়ে, হনুমান ও রামের ছবি আঁকা পতাকা নিয়ে যে মিছিল শহরে দেখা যায়, তা আগে কখনই হতো না। এমনটাই জানিয়েছেন প্রবীণ আশ্রমিকরা। এই উগ্রতার সংস্কৃতি বিজেপির হাত ধরেই রাজ্যে প্রবেশ করেছে বলে দাবি শান্তিনিকেতনের শিক্ষিত সমাজের। এতে বাংলা নিজস্ব সংস্কৃতি আস্তে আস্তে বিপন্ন হচ্ছে বলেও আশঙ্কা আশ্রমিকদের।
ঠাকুর পরিবারের সদস্য, পাঠভবনের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলছিলেন, ‘এই সংস্কৃতি বাংলার নয়, তাই কোনওদিনই আমি এই উন্মাদনা দেখিনি। এখন এসবও দেখতে হচ্ছে। আসলে, রবীন্দ্রনাথের মানবধর্মকে আর কেউ মানতে চাইছে না। সবটাই কেমন উগ্র আর গৈরিকীকরণের পথে চলেছে।’ এরপর প্রাক্তন উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর নাম না করে কটাক্ষ করে বলেন, ‘একজনের নমুনা তো দেখলাম, বিশ্বভারতীকে প্রায় বন্ধই করে দিচ্ছিলেন। গত পাঁচ বছরে নানা গৈরিকীকরণের প্রবৃত্তি বারবার নজরে এসেছে। ওঁর বিদায়ের পর এখন দেখার কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কাকে উপাচার্য করে পাঠান।’ রামনবমী নিয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘বিজেপি রাজ্যে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের সংস্কৃতি আমদানি হচ্ছে। এ নিয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই। এর ফলেই বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। যা শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতিতে কাম্য নয়। দুর্ভাগ্য, শান্তিনিকেতনে দুর্দিন এসেই গেল। আর রক্ষা করা যাবে ন। এবার সব ওলট-পালট হয়ে যাবে। বিশ্বভারতীর বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক, বিশিষ্ট রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে বসে রামনবমীর উচ্ছ্বাস কখনও দেখিনি। আসলে বর্তমান সময়ে আমরা রবীন্দ্রনাথ থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। জীবন চলমান, তাই জগন্নাথদেব হোক বা রাম, যাই হোক না কেন, তা শালীনতা ও রুচি বজায় রেখে হলেই ভালো।’