সুকান্ত বসু, কলকাতা: মন ভালো নেই আলিপুর, ব্যাঙ্কশালের কোর্টের বাইরে বসা টাইপিস্টদের। আজ বুধবার বিশ্বকর্মা পুজোয় চারদিক যখন আনন্দে মাতোয়ারা, তখন এই টাইপিস্টদের ঘরে গাঢ় অন্ধকার। শুধু তাই নয়, আলিপুরে নমো নমো করে পুজো হলেও ব্যাঙ্কশালে হচ্ছে না টাইপিস্টদের পুজো। তাঁদের বক্তব্য, লক্ষ্মীলাভই যদি না হয়, তাহলে কী করে পুজো করব বলুন তো! কথা হচ্ছিল আলিপুর ও ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটের বাইরে বসা টাইপিস্টদের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তাঁরা জানান, এক সময় বিশ্বকর্মা পুজো মানে ছিল বিশাল আনন্দ। পুজোর আগের দিন সুন্দর করে সাজানো হতো কোর্ট চত্বর। সাজানো হতো আলো দিয়ে। রং বেরংয়ের কাগজে সাজানো হতো চারধার। সকালে বাড়ির মেয়েরা এসে ফল কেটে পুজোর আয়োজন করতে আসত। অঞ্জলি শেষ হওয়ার পর শুরু হয়ে যেত প্রসাদ বিতরণ। এরপর দুপুরে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া। সেই তালিকায় থাকত সাদা ভাত, রুই মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, লম্বা বেগুন ভাজা, তরকারি, খাসির মাংস, চাটনি, পাঁপড়, মিষ্টি। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বাড়ির পথে পা বাড়ানো। কিন্তু এখন তা সবই স্মৃতি আর ইতিহাস ছাড়া কিছু নয়। তাই এই বিশেষ দিনটি এলে মনটা হু হু করে ওঠে। কেমন যেন বিষন্ন মনে হয়। কারণ পকেট যে ফাঁকা!
মঙ্গলবার বিকেলে কথা হচ্ছিল ব্যাঙ্কশাল স্ট্রিটে বসা টাইপিস্ট অলোককুমার হাইত, অমিত মুখোপাধ্যায়দের সঙ্গে। কথা প্রসঙ্গে তাঁরা বললেন, এখন ইলেকট্রনিক্স টাইপরাইটার, কম্পিউটার সহ নানা আধুনিক যন্ত্রপাতি এসে গিয়েছে। মান্ধাতার আমলের টাইপরাইটার নিয়ে আমাদের কাজ করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আধুনিকতার সঙ্গে কিছুতেই তাল মেলাতে পারছি না। ফলে সমস্যা হচ্ছে। আর কতদিন এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারব, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। ওই চত্বর ঘুরে দেখা গেল, বেশ কয়েকটি টাইপরাইটার ভাঙাচোরা অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তা দিয়েই কোনওভাবে চলছে কাজকর্ম। সেখানেই দেখা হল টাইপিস্ট মানিক সাহার সঙ্গে। তাঁর মেশিন অত্যন্ত পুরনো। বলেন, এই মেশিন দিয়েই তো দিব্যি চলছে। জীবনে বড় কোনও আশা নেই। বাকি জীবনটা এভাবে চলে গেলেই হল। ভগবানের কাছে এই আশাই রাখি।
আলিপুর কোর্ট চত্বরে দেখা গেল বেশ কিছু টাইপিস্টের সঙ্গে। তাঁদের চোখে মুখেও দুশ্চিন্তার ছাপ। কয়েকজন টাইপিস্ট বলেন, প্রতিযোগিতার বাজারে আমরা হেরে যাচ্ছি। আমাদের কাছে আধুনিক টাইপ মেশিন নেই। তাই আমাদের কাছে বিশ্বকর্মা ব্রাত্যই।