নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কেটে গেল এক বছর। কিন্তু বাগরি আছে, সেই বাগরিতেই! গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে বড়সড় অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছিল শহরের অন্যতম এই বড় মার্কেটটি। বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডে মার্কেটের আটটি ব্লকের মধ্যে ‘এ’ ব্লক সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয়ে যায়। ‘বি’ এবং ‘সি’ ব্লকের সামান্য ক্ষতি হয়। বাকি ব্লকগুলি অবশ্য অক্ষত অবস্থায় রয়ে গিয়েছে। ঘটনার পরে একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু বাগরি যে বাগরিতেই রয়েছে, তা শনিবার সকালে গিয়েই বোঝা গেল। অগ্নিকাণ্ডের জেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই মার্কেট সাত মাস পরে খুলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা গেল, স্বস্থানে এবং স্বমহিমায় ফিরে এসেছে সেই ‘ডালাতন্ত্র’। প্লাস্টিকের ছাউনিতে ঢাকা গোটা বাগরি মার্কেটের সামনের অংশ। সেই ছাউনির তলায় মার্কেটের গেটের সামনেই রমরমিয়ে চলছে ডালা নিয়ে ব্যবসা। এমনকী, ঘটনার পর তৎকালীন মেয়র তথা দমকলমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় (বর্তমানে বিজেপি নেতা) রীতিমতো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ফুটপাতে পসরা সাজিয়ে ব্যবসা করা যাবে না। কারণ, বাগরির আগুন নেভাতে গিয়ে অপরিসর জায়গায় চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছিল দমকল বাহিনীকে। অথচ দেখা গেল, সেই হুঁশিয়ারিকে ধর্তব্যের মধ্যে না এনেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন হকাররা। এদিন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, হকাররা এভাবেই ব্যবসা করে থাকে। আমাদের তো আর দোকান নেই। প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙিয়ে ব্যবসা না করলে আমরা চরম সমস্যা মধ্যে পড়ব। তবে প্রত্যেকে যে প্লাস্টিকের ছাউনি ব্যবহার করছে, তা নয়। অনেকে ছাতাও ব্যবহার করছে। স্থানীয় হকার ইমতিয়াজ আলম বলেন, আগে বাগরি মার্কেটের ই ব্লকের গেটের কাছে বসতাম। অনেক দিন বসতে পারিনি। ফের বাজার খুলতেই এসে বসেছি। তার জন্য অবশ্য গাড়ির পথ আটকে বসিনি। প্লাস্টিকের আচ্ছাদনের বদলে ছাতা ব্যবহার করছি। যদিও বাগরি মার্কেটের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীর কথায়, ছাতার ব্যবহার কম। প্লাস্টিকের ছাউনিই বেশি। গত বছর এত বড় অগ্নিকাণ্ড হওয়ার পরও যদি হকার বা প্রশাসন ‘ডালা-ব্যবস্থা’ নিয়ে শিক্ষা না নেয়, তাহলে আর কী বা বলার আছে!
এদিন বাগরি মার্কেটে গিয়ে দেখা গেল, সবক’টি প্রবেশপথের সামনেই ডালার ভিড়। এদিন দুপুরে ই ব্লকের গেটের মুখেই বেশ কয়েকজন ডালা নিয়ে বসে পড়ায় যাতায়াতে সমস্যা হচ্ছিল। ফের ডালা কেন, ওই ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞাসা করতেই রীতিমতো তেড়েফুঁড়ে উঠলেন কয়েকজন। বললেন, গড়িয়াহাটে শুনেছি, স্টল দেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্টল দেওয়া হোক, দেখবেন, প্লাস্টিকও থাকবে না, ডালাও নেই। বাগরি মার্কেট সেন্ট্রাল কলকাতা ট্রেডার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি আশুতোষ সিং বলেন, আপাতত বাগরির সবক’টি গেটেই গার্ডরেল বসানো হয়েছে। ডালা নিয়ে কেউ যাতে সামনে এসে না বসে, তার জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওরা এখন রাস্তার উপরে বসছে। তাই আমাদের কিছু করার নেই।
কিন্তু আদতে ডালা নিয়ে সেই নির্দেশকে কেউই ধর্তব্যের মধ্যে আনছে না। ডালায় শুধু প্লাস্টিকের ছাউনিই নয়, তাতে এমন অনেক সামগ্রী রয়েছে, যা দাহ্য। আগুন লাগলে ছড়িয়ে পড়বে নিমেষে। দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু বললেন, রাস্তা থেকে পসরা সরানো বা প্লাস্টিক খুলে দেওয়ার দায়িত্ব কলকাতা পুরসভার। দমকল দপ্তর বাগরি মার্কেটের কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যা যা সুপারিশ করেছিল, তার প্রায় সিংহভাগই তারা করেছে। বাকিটা সময়ের মধ্যেই বাগরি কর্তৃপক্ষ করে দেবে বলে জানিয়েছে। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, দমকলের অনুমতি সাপেক্ষেই বাগরি মার্কেট আবার খোলা হয়েছে। অনুমতির সময় বলা হয়েছিল, বাজারের ভিতরে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি দমকলের যাতায়াতের পরিসরও রাখতে হবে। তাই প্রবেশপথ আটকে কোনওভাবেই ডালা বসানো যাবে না। এই নিয়ম যাতে প্রত্যেকেই মেনে চলে, তার ব্যবস্থা করতে হবে।