নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বিধাননগর পুরসভার সদ্য প্রাক্তন মেয়র সব্যসাচী দত্তর ঘনিষ্ঠ এমআইসি প্রসেনজিৎ সর্দার পদ ছাড়লেন। জানালেন, সব্যসাচী দত্তর হাত ধরে আমি রাজনীতিতে এসেছি। তিনি মেয়র না থাকায় কষ্ট পেয়েছি। সেই জায়গা থেকে পদত্যাগ করেছি। তবে দলে থাকব। সোমবার বিকালে পুরসভার অফিসে গিয়ে তিনি চেয়াপার্সনকে উদ্দেশ করে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। উল্লেখ্য, মেয়র সব্যসাচী দত্তর বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে যে দুজন কাউন্সিলার সই করেননি তাঁর মধ্যে তিনিও ছিলেন। এ বিষয়ে পুরসভার ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় এদিন জানান, তিনি দলের সিদ্ধান্ত মানেননি। তাই দল হয়তো তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতই। সম্মান রক্ষার্থে তিনি পদত্যাগ করেছেন। তাছাড়া মেয়র নির্বাচনের সঙ্গে আবার এমআইসি পদে নতুন করে নির্বাচন হবেই।
এদিন দুপুরে একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপে সাংবাদিকদের সব্যসাচীবাবু জানান প্রসেনজিৎ সর্দার পদত্যাগ করতে চলেছেন। এরপর পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে প্রসেনজিৎ সর্দার প্রথমে জানান, ব্যক্তিগত কারণে তাঁর এই পদত্যাগ। তিনি আগেই পদ ছাড়তে চেয়েছিলেন। মেয়র তা গ্রহণ করেননি। ঠিকমতো বলা হয়নি বলে আমি অনাস্থা প্রস্তাবে সই করিনি। পরে খানিকটা ভেঙে জানান, সব্যসাচী দত্তর প্রতি নরম মনোভাব রয়েছে। সেই জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপর এমআইসি (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি দপ্তর ছাড়ার আগে কেঁদে ফেলেন।
এদিকে, এদিন পুরসভার মেয়র পারিষদ, কাউন্সিলাররা জানান, পরবর্তী মেয়র নির্বাচন কবে হবে সে বিষয়ে এদিন পর্যন্ত তাঁদের কাছে দল থেকে কোনও তথ্য আসেনি। এরই মধ্যে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়র পদের দাবিদারের সংখ্যা বাড়ছে। একাধিক কাউন্সিলার, মেয়র পারিষদ বায়োডেটা তৈরি করে বসে রয়েছেন। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁরা জানিয়েছেন, দল চাইলে জমা দিয়ে দেবেন তাঁরা। পুরসভার মেয়র পারিষদ (আলো ও পার্ক) সুধীর সাহা এদিন জানান, ১৯৬৪ সাল থেকে রাজনীতি করছি। রাজনৈতিক জীবনে বহু পদ সামলেছি। আমিও মেয়র হতে রাজি আছি।
এরই মধ্যে দীর্ঘদিন বিধাননগর পুরসভায় মেয়র পরিষদের বৈঠক না হওয়ায় বেশ কিছু পরিষেবায় সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে কাউন্সিলারদের মধ্যে চর্চা চলছে। পুরসভা সূত্রের দাবি, এর ফলে কোনও বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। বিভিন্ন পরিষেবার প্রয়োজনে নতুন মেশিন কেনা যায়নি। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নারায়ণপুরে পুরসভার হাসপাতালে ডায়ালিসিস ইউনিট চালু হওয়ার কথা ছিল। তা ঝুলে রয়েছে। তা চালু হলে পুরসভার ভর্তুকিতে ডায়ালিসিস পরিষেবা পাবেন বাসিন্দারা। জল বিভাগে কাজ করা ঠিকাদারদের বকেয়া টাকা পেতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। জানা গিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারিতে পুরসভার শেষ এমআইসি বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনী বিধি উঠে যাওয়ার পর গত প্রায় দুমাসে একটিও মেয়র পরিষদ বৈঠক হয়নি। এ বিষয়ে মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায় জানান, দৈনন্দিন রুটিন অনুযায়ী কাজ হয়েছে। তবে এমআইসি বৈঠক না হওয়ায় নতুন প্রস্তাব আনতে দেরি হয়েছে। বরো চেয়ারপার্সন অনিতা মণ্ডল জানান, এমআইসি বৈঠক না হওয়ার ফলে সমস্যা যে হয়েছে এটা বাস্তব। পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবাশিস জানা এ বিষয়ে জানান, আগে দেখা দরকার, পুরনো যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে, সেগুলি কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে।