বিদ্যা ও কর্মে উন্নতির যুগ অর্থকরি দিকটি কমবেশি শুভ। মানসিক চঞ্চলতা ও অস্থিরতা থাকবে। স্বাস্থ্যের ... বিশদ
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ভোর পাঁচটার সময় আচমকা পর পর তিনটি গুলির শব্দে পড়শিদের ঘুম ভেঙে যায়। স্থানীয় প্রবীণ এক বাসিন্দা বলেন, প্রথমটায় সকলে মনে করেছিল, শুভঙ্কর পায়রা ওড়ানোর জন্য মাঝে মধ্যে চকোলেট বোমা ফাটায়। সেই বোমা মনে করে সেভাবে গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু পর পর তিনটে গুলির মতো শব্দ পেয়ে রায়চৌধুরি বাড়ির দিকে সকলে দৌড়ে যায়। গিয়ে দেখতে পাই, বাড়ির ভিতর নীচতলায় খোলা বারান্দার উপর পোষ্য দু’টি কুকুর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। তার একটু আগে সিঁড়ির উপর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় নেতিয়ে পড়ে রয়েছেন শুভঙ্কর। পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে তার দোনলা বন্দুকটি। স্ত্রী পম্পা পাগলের মতো সেখানে বসে কাঁদছেন। পম্পা দেবী জানালেন, এমন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবে ভাবতে পারিনি। কোনও অস্বাভাবিকতা দেখিনি। এই সময় ঠাকুরের পালা চলছে বলে স্বামী নীচতলায় থাকতেন। কুকুরগুলি পাশে থাকত। খুব প্রিয় ছিল কুকুরগুলি। মেয়েকে নিয়ে দোতলায় থাকতাম আমি। ভোর পাঁচটার সময় আচমকা গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। তা শুনে দৌড়ে নেমে এসে দেখি স্বামী পড়ে রয়েছে। মাথা ও মুখ রক্তে মাখামাখি। স্ত্রীর কথায়, সম্প্রতি একটি অটো কিনে চালাচ্ছিল। তার দশ মাসের কিস্তি দিতে পারেনি। বুধবার সেই গাড়িটি টেনে নিয়ে যায় অর্থলগ্নি সংস্থা। তারপর কেমন চুপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এত বড় একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলবে ঘুণাক্ষরে বুঝতে পারিনি। তিনি জানান, বন্দুকটি তাঁর শ্বশুরের নামে। সেই সূত্রে স্বামীর কাছে রয়েছে। তার নাম পাল্টানোর চেষ্টা করছিলেন। ভেবেছিলেন, বন্দুক নিয়ে কোনও নিরাপত্তা সংস্থায় কাজ নেবেন। তার কোনওটাই হল না।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, অবস্থাপন্ন পরিবারের ছেলে শুভঙ্কর। এক সময় ওই তল্লাটের জমিদার বলে পরিচিত ছিল ওই রায়চৌধুরি পরিবার। বাড়িতে পুজোপার্বণ থেকে বাইরের লোককে নিমন্ত্রণ করে খাওয়া-দাওয়ার চল ছিল। জমিদারি দেখাশুনার জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোনলা বন্দুক ছিল। তিন বছর আগে বাবা বেঁচে থাকার সময় শুভঙ্কর বিয়ে করেন। সে সময় টাকাপয়সা ভালো ছিল। শুভঙ্করের শখ ছিল বিদেশি কুকুর ও দামী দামী পায়রা পোষা। পরের দিকে ঘরের জমানো টাকা দিয়ে আট থেকে দশটি অটো কিনে তা ভাড়া দিয়ে রোজগার শুরু করেন। দু’ বছর আগে মারা যান তাঁর বাবা। এতদিন সংসারের সমস্ত খরচ চালাতেন বাবা। এবার বিশাল দোতলা পৈতৃক বাড়ি তার যাবতীয় পুজোপার্বণ সামলানোর চাপ এসে পড়ে শুভঙ্করের উপর। এরমধ্যে তাঁর একটি মেয়ে হয়। এই সময় তিনি গাড়ির ব্যবসার পাশাপাশি পোষ্য কুকুরের বাচ্চা বিক্রি শুরু করেন। উভয় জায়গা থেকে লাভ হচ্ছিল। আচমকা কী মনে হওয়াতে একে একে অটো রিকশ বিক্রি করে দিতে থাকেন। মাঝে কিছুদিন পুণায় চাকরি করার জন্য চলে যান। সেখান থেকে ফিরে এসে ফের অর্থলগ্নি সংস্থা থেকে একটি অটো কেনেন। কিন্তু কিস্তির টাকা দিতে না পারায়, তাও টেনে নিয়ে যায়। অর্থের অভাবে পোষ্য কুকুরকে ঠিকমতো খাবার দিতে পারছিলেন না। সব মিলিয়ে ভয়ঙ্কর আর্থিক সঙ্কটে জেরবার হয়ে গিয়েছিলেন শুভঙ্কর।