বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
এখানেই থেমে যাননি হোসেনারা। বরং গমের বাড়তি ফলন পাওয়ার সাফল্যকে হাতিয়ার করে তিনি উদ্বুদ্ধ হন অন্য ফসল চাষে। আধুনিক চাষের অঙ্গ হিসেবে খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে হোসেনারা এবার বোনেন ধান ও পাট। ইতিমধ্যে গোদরেজ এগ্রোভেট ও সতীশ সাতমাইল কৃষক গোষ্ঠী তাঁদের গ্রামে মেশিনের সাহায্যে ধানের চারা রোপণের যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তা নিয়ে ফেলেছেন হোসেনারা। এবং সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক ধান চাষে আবারও তিনি সাড়া ফেলেন এলাকায়। ধীরে ধীরে দিনবদল ঘটতে থাকে হোসেনারার। একসময় যে জমি থাকা সত্ত্বেও হোসেনারার স্বামীকে দিনমজুরি খাটতে যেতে হতো, সেই জমিতেই ফসল ফলিয়ে তা বিক্রি করে মোটরবাইক কেনেন হোসেনারার স্বামী। আর এখন, হোসেনারা শুধু একজন সফল কৃষক নন, তিনি একজন পরিচিত কৃষি-উদ্যোগী। কৃষি-স্বনির্ভর গোষ্ঠীর অন্য মহিলাদের সঙ্গে নিয়ে প্লাস্টিক ট্রে অথবা পলিথিন চাদরের উপর ধানের চারা তৈরির ফ্যাক্টরি চালাচ্ছেন। মাস্টার ট্রেনার হিসেবে মেশিনে ধান বোনার ট্রেনিং দিচ্ছেন অন্য কৃষকদের। শুধু হোসেনারা নন, তাঁরই মতো ডিজিটাল টেকনলজি গ্রহণ করে কৃষিতে সাড়া ফেলেছেন কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের মুন্নি বিবি।
সতীশ সাতমাইল কৃষক গোষ্ঠীর সম্পাদক অমল রায় জানিয়েছেন, হোসেনারা বিবি মহিলাদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যিনি উন্নত কৃষিতে অন্য মহিলাদের পরিচালনা করছেন এবং সবাইকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে তাঁরাও স্বাধীনভাবে এক-একজন কৃষি উদ্যোগী হয়ে উঠতে পারেন। হোসেনারার গল্প কৃষিক্ষেত্রে আরও অনেক মহিলাকে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করবে, যাঁরা এতদিন আড়ালে থেকে যাওয়া কৃষিকর্মী হিসেবে রয়ে গিয়েছেন। গোদরেজ এগ্রোভেটের তরফে জানানো হয়েছে, কৃষকদের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে সুস্থিত কৃষি-উৎপাদন বৃদ্ধি করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
কৃষকের লাভের কথা মাথায় রেখে ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে নিরন্তর তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। আর সেকারণেই তারা চালু করেছে সিএসআর ( কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সেবল) প্রোগ্রাম। যার লক্ষ্য, নতুন প্রযুক্তির পরিচয় ঘটানো। চাষে খরচ কমানো, কৃষকের লাভ বৃদ্ধি, বাড়তি আয় এবং ভালো ও স্থায়ী বাজারের খোঁজ দেওয়া।
হোসেনারা বিবি জানিয়েছেন, আমাদের সম্বল বলতে তিন বিঘা চাষের জমি। কিন্তু দু’বছর আগেও সেই জমিতে ফসল বলতে শুধুমাত্র আমন ধান চাষ হতো। তা-ও তিন বিঘায় ফলন মিলত বড়জোর ৩০ মণ। ফলে সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছিল। উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে এখন ওই জমিতে আমন চাষ করে প্রতি বিঘায় ২০-২২ মণ ধান উৎপাদন হচ্ছে। চাষে লাভও মিলছে। সেই টাকাতেই ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার খরচ চালাচ্ছি। স্বামীর অনেক দিনের শখ ছিল একটা বাইকের। চাষের লাভের টাকায় সেই শখ পূরণ করেছি।
সাতমাইল সতীশ ক্লাব কৃষক গোষ্ঠীর সম্পাদক অমল রায় জানিয়েছেন, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে চাষাবাদে লাভ পাওয়া যেতে পারে, তা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাছচাষ, পোল্ট্রি, মাশরুম উৎপাদনে জোর দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৫৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের মধ্যে থেকে মাস্টার ট্রেনার তৈরি করা। যাতে তাঁরা অন্য কৃষকদের ট্রেনিং দিতে পারেন।